শখের মোটরসাইকেল কেনার টাকায় অসহায় মানুষের পাশে দুইভাই

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরগুনা
প্রকাশিত: ১০:৩০ পিএম, ১৫ মে ২০২০

বরগুনার বেতাগী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ইজাজ মাহমুদ নৌবাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। বড় ভাইয়ের পুরান একটি মোটরসাইকেল জড়িয়ে যার অনেক স্মৃতি। গত দুই বছর ধরে বড় ভাইকে একটি নতুন মোটরসাইকেল উপহার দিতে অর্থ জমিয়েয়েছেন ইজাজ। টাকাও পাঠিয়েছেন বাড়িতে।

কিন্তু করোনাকালের এই ভয়াবহ দুর্যোগে মোটরসাইকেল না কিনে সেই টাকার সাথে বাবার দেয়া এবং নিজের সঞ্চিত আরও কিছু অর্থ মিলিয়ে গ্রামের দরিদ্র অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন বড়ভাই রিয়াজ মাহমুদ।

এতে সায় দেন ছোটভাই ইজাজ মাহমুদ এবং বাবা আবুল হোসেনও। দুই ভাইয়ের ছোট্ট এ উদ্যোগটি ইতোমধ্যেই প্রশংসা কুড়িয়েছে বেশ।

বরগুনার বেতাগী উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নের বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত সোবেদার অবুল হোসেনের তিন মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে ইজাজ মাহমুদ সবার ছোট। লেখাপড়া করেছেন বরিশাল ক্যাডেট কলেজে। বড়ভাই রিয়াজ মাহমুদ তার একটি পুরান মোটরসাইকেলে চড়িয়ে ছোটভাই ইজাজ মাহমুদ অনেকদিন বরিশাল ক্যাডেট কলেজে এগিয়ে দিয়ে এসেছেন। আবার নিয়েও এসেছেন বিভিন্ন ছুটির দিনগুলোতে। ছোটভাই ইজাজ মাহমুদ নিজেও মোটরসাইকেল চালানো শিখেছেন বড় ভাইয়ের পুরান ওই মোটরসাইকেল দিয়েই।

Barguna-1

বড়ভাই রিয়াজ মাহমুদ স্থানীয় মোকামিয়া বাজারে ছোট্ট একটি ওষুধের দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।

বড়ভাই রিয়াজ মাহমুদ বলেন, ছোটভাই ইজাজ অনেক দিন ধরেই বলে আসছিলেন, ‘ভাইয়া তোমার মোটরসাইকেলটা অনেক পুরান হয়ে গেছে। এখন ওটি পাল্টিয়ে নাও। আমি কিছু টাকা পাঠাচ্ছি। ছোটবেলা থেকেই মোটরসাইকেলের ওপর ওর ভিষণ ঝোঁক ছিলো। আমি একটি নতুন মোটরসাইকেল কিনলে বাড়ি এসে সেও চালাতে পারবে। কিন্তু আমি এবং আব্বা মিলে চিন্তা করলাম বেঁচে থাকলে মোটরসাইকেল হয়তো পরেও কেনা যাবে কিন্তু এখন নারী ও শিশুসহ যেসব দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে তাদের পাশে দাঁড়ানো সবচেয়ে বেশি জরুরি।

রিয়াজ মাহমুদ আরও বলেন, আব্বার সাথে কথা বললে আব্বাও রাজি হলেন। বললেন, তার পেনশনের কিছু টাকা থেকেও তিনি কিছু টাকা দিতে চান। এর সাথে আমিও মিলালাম আমার সঞ্চিত কিছু অর্থ। এই অর্থ দিয়ে মোকামিয়া ইউনিয়নের শতাধিক পরিবারের মাঝে পাঁচ কেজি চাল, এক লিটার তেল, আধাকেজি ডাল, আধাকেজি ছোলার ডাল, আধাকেজি চিনি, আধা কেজি খেজুর, আধাকেজি চিড়া আর একটি করে স্যাভলন সাবান পৌঁছে দিলাম।

নতুন মোটরসাইকেল না কিনে সেই টাকা দিয়ে স্থানীয় দরিদ্রদের খাদ্য সহায়তা বিতরণ করায় খুশি ছোটভাই ইজাজ মাহমুদসহ বাবা আবুল হোসেনও। বাংলাদেশ নৌবহিনীর সাব লেফটেনেন্ট ইজাজ মহিমুদ বলেন, ভাইয়া অনেক কষ্ট করেছেন। যখন ক্যাডেট কলেজে পড়তাম তখন তার পুরান ওই মোটরসাইকেলটি নিয়ে আমাকে পোঁছে দিতেন বরিশাল ক্যাডেট কলেজে। পথে অনেকবার মোটরসাইকেলের স্টার্ট বন্ধ হয়ে যেত। ভাইয়ার ওই মোটরসাইকেলটা নিয়ে আমার কৈশোরের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তাই ভাইয়ার জন্য একটি মোটরসাইকেল কিনে দেব বলে অনেকদিন ধরেই কিছু টাকা জমিয়ে রেখেছিলাম।

বেতাগী উপজেলার ৪নং মোকামিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব আলম সুজন মল্লিক বলেন, দুই ভাইয়ের এই মানবিক সহযোগিতা সত্যিই একটি ব্যতিক্রমী উদাহরণ। এই দুই ভাইয়ের মতো সবাই যদি নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী মানবিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসে তাহলে করোনা সংকট কাটাতে আমাদের খুব একটা বেগ পেতে হবে না।

সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।