ঝুঁকি আছে জেনেও মার্কেটে নেয়া হচ্ছে শিশুদের
মরণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ১৭ শর্তে দোকান ও মার্কেট খোলার অনুমতি দিলেও তা মানা হচ্ছে না রংপুরে। ঝুঁকি আছে জেনেও স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব না মেনে বিভিন্ন শপিংমল, মার্কেটসহ দোকানে দোকানে দেদারসে চলছে কেনাকাটা। মার্কেটে আসা থেকে বাদ পড়ছে না শিশুরাও। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, বাড়ছে ঝুঁকি। সংক্রমণ রোধে দোকানপাট বন্ধ করতে করোনা প্রতিরোধ নাগরিক কমিটি ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন মানববন্ধন এবং স্মারকলিপি পেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করলেও হচ্ছে না এর প্রতিকার।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, রংপুর জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ এপ্রিল। এরপর পরবর্তী একমাসে (৮ মে) করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৪ জনে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (২১ মে) পর্যন্ত রংপুর জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা ৩২৫ জন। অর্থাৎ ৯ মে থেকে ২১ মে পর্যন্ত এই ১২ দিনেই বেড়েছে ১৯১ জন। কেবল শেষের ৬ দিনেই (১৬ মে থেকে-২১ মে) বৃদ্ধি পেয়েছে ১২৪ জন। আর ৩২৫ জন আক্রান্ত রোগীর মধ্যে কেবল সিটি কর্পোরেশন এলাকাতেই রয়েছে অন্তত ২৩০ জন।
বুধবার (২০ মে) জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর গণেশপুর থেকে ৬ বছরের মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন গৃহিণী লাবনী আক্তার।
শিশু সন্তানকে নিয়ে মার্কেটে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঝুঁকি আছে জানি। কিন্তু কিছু করার নেই। বাসায় আর কেউ না থাকায় তাকে সঙ্গে নিয়েই আসতে হয়েছে।
একই চিত্র দেখা গেছে ছালেক মার্কেট ও জেলা পরিষদ কমিউনিটি মার্কেটসহ বিভিন্ন শপিংমলে।
ছালেক মার্কেটে গিয়ে কথা হয় নগরীর নুরপুর এলাকার গৃহবধূ শাহানা বেগমের সঙ্গে। তিনিও দুই বছরের মেয়েকে নিয়ে এসেছেন ঈদের কেনাকাটা করতে।
জানতে চাইলে শাহানা বলেন, একটু রিস্কতো নিতেই হবে। করোনা ধরলে দেখা যাবে।
এদিকে ১০ মে থেকে লকডাউন শিথিল করে দোকানপাট খুলে দেয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতার অবাধ চলাচল করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
করোনা প্রতিরোধ নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল রংপুর। লকডাউন শিথিলের পর দোকানপাট খুলে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের চলাচল অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মানষজন কেনাকাটা করছেন। সরকারি নির্দেশনায় লকডাউন কিছুটা শিথিল হলেও অনেক জায়গায় কম করোনা আক্রান্ত রোগী থাকার পরও শপিংমল, মার্কেট বন্ধ রাখা হয়েছে। তারা নিজেদের স্বার্থে এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। অথচ রংপুরে ক্রমান্বয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও কেউ তোয়াক্কা করছেন না।
তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে করোনা প্রতিরোধ নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ও মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), মানবাধিকার ও পরিবেশ আন্দোলনসহ (মাপা) বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে রংপুরকে রেড জোন ঘোষণার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।
দোকানপাট বন্ধ ও যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপের দাবিতে ‘জনতার রংপুর’ নামে একটি সংগঠন মানববন্ধনসহ প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। দোকান বন্ধ রাখতে রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে সমিতির নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এতো কিছুর পরও কোনো প্রতিকার নেই, কেউই পরোয়া করছে না।
সনাক রংপুরের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সদরুল আলম দুলু আক্ষেপ করে বলেন, করোনা বিস্তার রোধে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্রেতা, বিক্রেতাসহ জনস্বার্থে ১৭টি নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে শিশুদের মার্কেটে না আনতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানানো হলেও অনেকেই তা মানছে না।এভাবে চলতে থাকলে শিশুসহ নগরবাসী মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় গঠিত টাস্কফোর্সের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় বাজার মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এ সময় শপিংমল ও বাজারসমূহে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সুরক্ষামূলক সকল কার্যক্রম গ্রহণে ব্যবসায়ীদের সচেতন ও সতর্ক করা হয়। একইসঙ্গে ক্রেতাদেরকে মাস্ক ব্যবহারসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সচেতন ও সতর্ক করা হয়।
সরকারি আদেশ অমান্য করে বিভিন্ন কার্যক্রম সংঘটনের অপরাধে প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
জিতু কবীর/এফএ/এমএস