অবুঝ দুই সন্তানের জন্য করোনা আক্রান্ত বাবার আফসোস

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সুনামগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৫:৫৯ পিএম, ২৯ মে ২০২০

সুনামগঞ্জে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশেষ করে গত কয়েকদিনে আক্রান্তদের সংস্পর্শে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বেশি।

বৃহস্পতিবার (২৮ মে) রাতে সুনামগঞ্জে নতুন করে আরও ১৮ করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুই শিশুর করোনা পজিটিভ এসেছে। আক্রান্ত দুই শিশুর বয়স ৩ ও ৫ বছর। তারা দুই ভাই। তাদের বাবা পুলিশের এএসআই। যিনি কয়েকদিন আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে নিজের অজান্তে সন্তানদের আদর করার সময় সংক্রমিত হয়েছে দুই ছেলে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জে এখন পর্যন্ত ১৭ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের প্রত্যেকে পুলিশ লাইনে কর্মরত ছিলেন। বাইরে দায়িত্বপালন করেছেন তারা। আক্রান্ত সবাইকে পুলিশ লাইন হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে তাদের মধ্যে আক্রান্ত পুলিশের ওই এসআই ছিলেন পুলিশ লাইন মেসের ম্যানেজার। বর্তমানে পুলিশ লাইনের ম্যানেজার ও খাবারের আনা-নেয়া দায়িত্বে থাকা গাড়িচালক দুইজনই করোনায় আক্রান্ত।

যখন সুনামগঞ্জে প্রথম করোনা আক্রান্ত পুলিশের তথ্য পাওয়া যায় তখন পুলিশ লাইনের সবার নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। পরে পুলিশের ওই এএসআইয়ের করোনা পজিটিভ আসে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি প্রথমেই করোনা আক্রান্ত হয়ে নিজের অজান্তে বাসায় যান। পরবর্তীতে রিপোর্টে শনাক্ত হওয়ার পর আইসোলেশনে যান। করোনা রিপোর্টের ফলাফল আসার আগ পর্যন্ত তিনি পরিবারের সঙ্গে বাসায় থেকেছেন। বাসা থেকে গিয়ে পুলিশ লাইনে দায়িত্বপালন করেছেন। বাসায় থাকার কারণে দুই সন্তান বাবার সংস্পর্শে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে।

সুনামগঞ্জের পুলিশ লাইনে আক্রান্ত হওয়া ১৭ জন পুলিশ সদস্য বর্তমানে শারীরিকভাবে সুস্থ রয়েছেন। তাদের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন চিকিৎসকরা।

করোনায় আক্রান্ত পুলিশের এএসআই বলেন, আমার কোনো উপসর্গ ছিল না। আমি সতর্কতা অবলম্বন করেই চলছিলাম। সতর্কতা হিসেবে আমি ঈদের জামাতেও অংশ নিইনি। এরপরও করোনাভাইরাসে আমি আক্রান্ত হয়েছি। গত ২৪ মে নমুনা দেয়ার পরে ২৫ মে করোনা পজিটিভ আসে আমার।

তিনি আরও বলেন, আমার কোনো ধরনের সমস্যা নেই এখন। পুলিশ লাইন হাসপাতালের আইসোলেশনে আছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। কিন্তু গতকালের রিপোর্টে আমার দুই ছেলেরও করোনা শনাক্ত হয়েছে। আমি নিজের থেকে এখন তাদের নিয়ে চিন্তিত। অবুঝ দুই শিশু আমার কাছে এসেই আক্রান্ত হয়েছে। আমি নুমনার ফলাফল আসার পর আলাদা হয়ে যাই। কিন্তু তার আগে আমি বাসায় গেছি, বাচ্চারা আমার কাছে এসেছে। আমি তাদের আদর করেছি। আমি করোনায় আক্রান্ত আগে জানলে অবুঝ দুই সন্তানের কাছেও যেতাম না। আমি চাই না আমার মতো কারও সন্তান করোনায় আক্রান্ত হোক। আমার ছেলেদের জন্য সবাই দোয়া করবেন।

সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের পুলিশ সদস্যরা দায়িত্বপালন করতে গিয়ে কারও কাছ থেকে সংক্রমিত হয়েছেন। যেহেতু কয়েকদিনে লক্ষণ বোঝা যায় না; সেহেতু যেই পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন তিনি না জেনে অন্যদের সঙ্গে মিশেছেন। ফলে আমাদের আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু বর্তমানে আক্রান্তদের অবস্থা ভালো রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পুলিশের এএসআইয়ের যে দুই শিশু আক্রান্ত হয়েছে; তাদের চিকিৎসাও পুলিশ লাইন হাসপাতালে হবে। পুলিশ তাদের পরিবারের পাশে সবসময় রয়েছে। তারা যদি চায় অন্য কোথাও আইসোলেশনে রাখতে; আমরা সেক্ষেত্রে সহযোগিতা করব।

মোসাইদ রাহাত/এএম/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।