সবার অনুকরণীয় এখন ‘স্প্রে আশিক’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ০৯:১৯ পিএম, ২৯ মে ২০২০

কখনও হাসপাতালে আবার কখনও মসজিদ-মন্দিরে জীবাণুনাশক স্প্রে মেশিন নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন আশিকুল আলম। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে বিরামহীন ছুটছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই যুবক। শহরবাসীর কাছে অচেনা এ যুবক করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই জীবাণুনাশক ছিটিয়ে যাচ্ছেন সবখানে। প্রতিদিনই এমন জীবাণুনাশক স্প্রে মেশিন নিয়ে ঘুরে-বেড়ানোয় এখন সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছেন ‘স্প্রে আশিক’ নামে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মুন্সেফপাড়া এলাকার মৃত মো. হাবিব আলমের ছেলে আশিকুল আলম পেশায় ব্যবসায়ী। পাশাপাশি রোটারি ক্লাবের সঙ্গেও যুক্ত আছেন তিনি। করোনাভাইরাসের প্রভাবে এখন তার ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। কিন্তু দেশের এই ক্রান্তিকালে ঘরে বসে না থেকে চারপাশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখার জন্যই আশিকের এই প্রয়াস। প্রতিদিন সকালে ১৮ লিটার ওজনের জীবাণুনাশক ভর্তি স্প্রে মেশিন নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে বাসা-বাড়ি, মসজিদ-মন্দির, সরকারি-বেসরকারি অফিস এবং সড়কে স্প্রে করেন জীবাণুনাশক।

তবে শুধু জীবাণুনাশক ছেটানোতেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি তিনি। বর্তমানে ‘বেকার’ আশিক নিজের জমানো টাকায় করোনা দুর্গত শতাধিক দরিদ্র পরিবারকে দিয়েছেন খাদ্য সহায়তা। পাশাপাশি রোজার মাসে বিলিয়েছেন সাহরি ও ইফতারের খাবার।

Ashik-2

আশিকুল আলম জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ২৪ মার্চ জীবাণুনাশক ছেটানোর জন্য একটি স্প্রেশ মেশিন কেনেন তিনি। প্রথম দিন নিজের ঘর ও আশপাশের সড়কে জীবাণুনাশক ছেটান। এরপর এলাকার অন্যদের কথা চিন্তা করে কাঁধে স্প্রে মেশিন নিয়ে বেরিয়ে পড়েন শহরে।

তিনি আরও জানান, মানুষের সুরক্ষার কথা চিন্তা করেই বাসা-বাড়ি, সরকারি-বেসরকারি অফিস, হাসপাতাল-ক্লিনিক, মসজিদ-মন্দির, যানবাহন ও সড়ক জীবাণুমুক্ত করতে জীবাণুনাশক ছেটানোর কাজ করতে থাকেন তিনি। এখন এই স্প্রে মেশিনই তার নিত্যসঙ্গী।

আশিক বলেন, পানির সঙ্গে ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে জীবাণুনাশক তৈরি করি। এরপর ১৮ লিটারের স্প্রে মেশিনটিতে জীবাণুনাশক ভরে কাঁধে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ি। এটি শেষ হলে আবারও নতুন মিশ্রন তৈরি করি। এভাবে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ লিটারের বেশি জীবাণুনাশক ছিটাই।

Ashik-2

ভ্রমণপ্রিয় আশিক ইউরোপ-আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের ৩০টিরও বেশি দেশে ভ্রমণ করেছেন। ‘স্প্রে আশিকের’ জীবাণুনাশক ছিটানোর বিষয়টিকে অনুকরণীয় হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা।

তাদের মতে, আশিকের মতো সবাই যদি এগিয়ে আসেন তাহলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় করোনা দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারবে বাংলাদেশ।

এ ব্যাপারে জেলা নাগরিক ফোরামের সভাপতি পীযূষ কান্তি আচার্য বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই আশিককে দেখছি জীবাণুনাশক ছেটাতে। তার এই প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয় এবং অনুকরণীয়।

আজিজুল সঞ্চয়/এফএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।