৭৫ দিন পর আজ থেকে সচল বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর
৭৫ দিন পর ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সড়কপথে আমদানি-রফতানি শুরু হয়েছে। দু’দেশের প্রশাসন ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে শনিবার (৬ জুন) সকাল থেকে আমদানি-রফতানি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ জুন) বিকেলে সীমান্তের জিরো পয়েন্ট এলাকায় দুই দেশের প্রশাসন ও ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে এ বৈঠক হয়।
করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৩ মার্চ থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দু’দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গত ২৪ এপ্রিল আমদানি-রফতানির অনুমোদন দিলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুমতি না থাকায় দীর্ঘদিন সড়কপথে বন্ধ ছিল ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্য। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বারবার চিঠি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে স্থলবন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুরুর অনুমতি দেয়ার অনুরোধ করলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন।
এছাড়াও বনগাঁর সিন্ডিকেটের কারণেও বাণিজ্যে জটিলতা দেখা দেয়। পরে রেলওয়ের মাধ্যমে পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়ায় স্থলপথে আমদানি-রফতানির ওপর চাপ সৃস্টি করে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর এলাকার শ্রমিকসহ ট্রাক মালিক ও চালকরা। বাধ্য হয়ে তড়িঘড়ি করে বৈঠকে বসে দু’দেশের কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে আমদানি-রফতানি চালু করতে রাজি হয় ভারতের প্রশাসনসহ বনগাঁ সিন্ডিকেট।
তবে করোনার সংক্রমণ নিয়ে আশঙ্কা থাকায় সীমান্ত অতিক্রমের আগেই গাড়ি চালকদের শারীরিক অবস্থার পরীক্ষা করা হবে। এছাড়াও ট্রাকগুলো উভয় দেশে স্যানিটাইজ করা হবে। ফেরার সময়ও চালকদের শারীরিক পরীক্ষা করা হবে। একই সঙ্গে দ্রুত পণ্য খালাস করে দিনের মধ্যেই ট্রাকগুলো ফিরে যাবে।
বৈঠকে ভারতের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী, বনগাঁ পৌরসভার মেয়র শংকর আঢ্য ডাকুসহ কাস্টমস, পুলিশ, বিএসএফ ও পেট্রাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস, ট্রাক মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বাংলাদেশের পক্ষে বেনাপোল বন্দর, কাস্টমস, বিজিবি ও সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, সিএন্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, করোনার কারণে দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ। করোনার এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধিসহ অন্যান্য নির্দেশনা মেনে আজ শনিবার থেকে আমদানি-রফতানি শুরু করতে দু’দেশের নেতৃবৃন্দ একমত পোষণ করেছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে আমদানি-রফতানির জন্য ৫০টি পণ্যবাহী ট্রাক দিতে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা সম্মতি দিয়েছেন। পরে পরিস্থিতি দেখে ট্রাকের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।
এদিকে বেনাপোল স্থল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালু করতে বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া ভারতীয় চালককরা যাতে পোর্টের বাইরে যেতে না পারে সে ব্যাপারে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সরকার অনুমোদিত ২৩টি স্থলবন্দরের মধ্যে চলমান ১২টি বন্দরের মধ্যে অন্যতম বেনাপোল স্থলবন্দর। এ বন্দর থেকে ভারতের কলকাতা শহরের দূরত্ব ৮৩ কিলোমিটার। মাত্র ৩ ঘণ্টায় একটি পণ্যবাহী ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে বন্দরে পৌঁছাতে পারে কলকাতা শহর থেকে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এপথে ব্যবসায়ীদের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে প্রবল আগ্রহ রয়েছে। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৮০ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হচ্ছে। যা থেকে সরকার প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে থাকে। আমদানি পণ্যের মধ্যে গার্মেন্টস সামগ্রী, তৈরি পোশাক, শিল্পকারখানা ও ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল, শিল্প প্রতিষ্ঠানের মূলধনী যন্ত্রপাতি, কেমিক্যাল, খাদ্যদ্রব্য, চাল, পেঁয়াজ, তুলা, বাস, ট্রাক ট্যাসিস, মটর সাইকেল এবং পার্টস ও টায়ার রয়েছে।
রফতানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত দ্রব্য, সাদা মাছ, ব্যাটারি, ওভেন গার্মেন্টস, নীটেড গার্মেন্টস, নীটেড ফেব্রিকস, বর্জ্য কাপড় উল্লেখ্যযোগ্য।
মো. জামাল হোসেন/এমএফ/এমএস