করোনা সংকটে ঘরে থাকতে পারলেন না ১৩ ইন্টার্ন চিকিৎসক
পর্যটন নগরী কক্সবাজারে প্রতিদিনই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্তের পাশাপাশি বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। শুক্রবার (৫ জুন) সন্ধ্যা থেকে শনিবার (৬ জুন) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে কক্সবাজারে পর্যটন উদ্যোক্তাসহ মারা গেছেন পাঁচজন।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে শনিবার ৩৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০৮ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। দিন দিন রোগী ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। রোগীর সেবা ও মৃতদের দাফনে স্বজনরা কাছেও ভিড়ছে না।
জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছুঁই ছুঁই এবং মৃতের সংখ্যা ২০ জন পার হওয়ায় কক্সবাজার পৌরসভাসহ জেলার কয়েকটি এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার ভোর থেকেই কঠোরভাবে পালিত হচ্ছে লকডাউন কার্যক্রম।
করোনা অপ্রতিরোধ্য হয়ে দেখা দেয়ায় সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা সংক্রমণের ভয়ে পর্যাপ্ত সেবা দিচ্ছেন না কিংবা রোগীদের এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ আসছে বার বার। কক্সবাজারেও একই অভিযোগ হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে।
এমন সব অভিযোগের মধ্যে আশা জাগিয়েছেন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ৭ম ব্যাচের ১৩ ইন্টার্ন চিকিৎসক। করোনার দুর্যোগকালীন এই পরিস্থিতিতে রোগীদের সেবার ব্রত নিয়ে শনিবার (৬ জুন) কক্সবাজার সদর হাসপাতালে যোগদান করলেন ইন্টার্ন চিকিৎসক হুমায়রা আমরিন, ইফতারোজ জাহান, শান্তা বিশ্বাস, মো. ইমরানুল ইসলাম, তারেক নেওয়াজ উল্লাস, তাসিন তাহা, ইকবাল মাহমুদ বেলাল, সায়েদ মুহাম্মাদ সালেম, জুবাইদা নাসরিন, সুদীপ্ত ঘোষ, টি এম মুজাহীদুল ইসলাম, রায়হান আহমেদ ও সাকিব রেজা।
ইন্টার্ন চিকিৎসক সাকিব রেজা বলেন, ডাক্তারি পড়েছি রোগীদের সেবা করবো বলে। এখনই আমাদের সেবার হাত প্রসারিত করার সুযোগ। ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করতে গিয়ে যদি একজন রোগীও উপকৃত হন এটিই হবে আমাদের চিকিৎসাবিদ্যা পড়ার সার্থকতা। মৃত্যু যেভাবে লেখা আছে সেভাবে হবেই- তা আটকানোর ক্ষমতা কারও নেই। রোগে আক্রান্ত হবো বলে হাত গুটিয়ে বাড়িতে বসে থাকা কাপুরুষের লক্ষণ হবে। তাই আমরা ১৩ বন্ধু নিজেদের দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করতে এসেছি।
হুমায়রা আমরিন বলেন, কাজ করতে এসেই শুরুতে সিনিয়রদের অনুপ্রেরণা ও পরামর্শ পেয়েছি। সংকটকালে নিজেদের নিরাপদ রেখে কিভাবে কাজ করা যাবে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও হাসপাতালের চিকিৎসকগণ। পাশাপাশি করোনাকালীন দায়িত্ব পালনে নিরাপত্তা সামগ্রীও প্রথম দিনেই সরবরাহ করেছেন তত্ত্বাবধায়ক স্যার। এটি সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে। দায়িত্ব পালনে আমরা সবার দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি।
সদ্য বিশেষ বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে করোনাকালীন সেবায় আত্মনিয়োগ করা কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. রিপন চৌধুরী বলেন, সারা দেশ যখন লকডাউনে, সবাই যখন আক্রান্ত হওয়ার অজানা আতঙ্কে আতঙ্কিত ঠিক তখন কক্সবাজারবাসীর প্রয়োজনে ১৩ ইন্টার্ন চিকিৎসকের স্বপ্রণোদিত হয়ে সেবায় এগিয়ে আসা আমাদের জন্য আনন্দের। আমার বিশ্বাস তারাই কক্সবাজারের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারবে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মহিউদ্দিন বলেন, কোনো চিকিৎসকই পারতপক্ষে রোগীকে ফেরত দেন না। পেশাটার মূলই হচ্ছে সেবা। আমরা সেবা দিতে পারলেই আনন্দ উপভোগ করি। কঠিন এই সময়ে সদর হাসপাতালে যোগ দেয়া ১৩ ইন্টার্ন চিকিৎসকেও সে বিষয়ে বলা হয়েছে। তারা হাসপাতালে কাজ করা ৫৯ চিকিৎসকের নির্ভরযোগ্য সহযোগী হবে এমনটিই আশা করছি।
সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/পিআর