করোনার আঘাতে ৫৩ থেকে ২৩ কোটিতে নামল রফতানি বাণিজ্য
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আঘাতে আবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের রফতানি কার্যক্রম।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ছয় সদস্য, দুইজন কাস্টমস এবং ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার জেরে রোববার (০৭ জুন) থেকে বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিচ্ছেন না ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এতে প্রতিদিন অন্তত এক কোটি টাকার পণ্য রফতানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।
স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় পাথর, সিমেন্ট, মাছ, শুঁটকি, ভোজ্যতেল, প্লাস্টিক ও ফলমূলসহ বিভিন্ন পণ্য রফতানি হয়। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে দৈনিক কয়েক কোটি টাকার পণ্য রফতানি হতো।
কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ২৪ মার্চ হঠাৎ করে পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ভারতজুড়ে চলা লকডাউনের কারণে দেশটির অন্য রাজ্য থেকে পণ্য সরবরাহ না বন্ধ থাকায় পুনরায় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মাছ ও ফলমূল আমদানিতে আগ্রহ দেখান সেখানকার ব্যবসায়ীরা। পরবর্তীতে ৪ এপ্রিল আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য রফতানি শুরু হয়। প্রথমে শুধু মাছ রফতানি হয়। এর কিছুদিন পর অন্যান্য পণ্যও রফতানি স্বাভাবিক হয়।
তবে করোনাভাইরাসের প্রভাবে পণ্য আমদানির পরিমাণ কমিয়ে দেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে প্রতিদিন ৪০টি পণ্যবোঝাই ট্রাক যাচ্ছে আগরতলায়। সবমিলিয়ে এখন গড়ে প্রতিদিন এক কোটি টাকার রড-সিমেন্ট, ভোজ্যতেল, মাছ, শুঁটকি, প্লাস্টিক ও বিভিন্ন ফলমূল রফতানি হয়।
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের ব্যাপক প্রভাব পড়ে বন্দরের রফতানি বাণিজ্যে। মার্চ মাসে ২৩ হাজার ১৩৪ মেট্রিক টন বিভিন্ন পণ্য রফতানি হয়; যার মূল্য ৫৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এপ্রিল মাসে রফতানি হয় ৩১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা মূল্যের ৪ হাজার ৪১৭ মেট্রিক টন পণ্য। আর মে মাসে রফতানি হওয়া ১৫ হাজার ৫৫৮ মেট্রিক টন পণ্যের মূল্য ছিল ২৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
তবে আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টে দায়িত্বরত ছয় বিএসএফ সদস্য, দুইজন কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার জেরে আবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে রফতানি বাণিজ্য। এবারও আগে থেকে কিছু না জানিয়ে ৭ জুন থেকে পণ্য নিচ্ছেন না ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।
ফলে আখাউড়া স্থলবন্দরে বেশ কয়েকটি পণ্যবোঝাই ট্রাক আটকা পড়ে আছে। রফতানি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রতিদন এক কোটি টাকার পণ্য রফতানি করতে পারছেন না বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি সরকারও রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টে যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা আর না বাড়ে তাহলে আগামী শনিবার (১৩ জুন) থেকে আবারও রফতানি কার্যক্রম শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেটি এখনও নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছেন আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা।
বন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতে রফতানির পরিমাণ কমে গেছে। এর মধ্যে বিএসএফ সদস্য ও কাস্টমস এবং ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের আক্রান্তের ঘটনায় পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেয়ায় নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বন্দরে বিভিন্ন ফলমূলের ট্রাক আটকা পড়েছে। ফলগুলো পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে করে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হবে। এভাবে কয়দিন পর পর পণ্য নেয়া বন্ধ করে দেয়ার ফলে ব্যবসায়ীদের আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। সেজন্য সরকারের কাছে প্রণোদনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে অর্ধেকের নিচে নেমেছে রফতানির পরিমাণ। আমাদের আর্থিকভাবে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা সরকারের কাছে প্রণোদনার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন ১২ জুন পর্যন্ত পণ্য আমদানি বন্ধ রাখবেন। করোনা পরিস্থিতি ভালো হলে ১৩ জুন থেকে পণ্য নেয়ার কথা রয়েছে। তবে এখনও তারা স্পষ্ট করে আমাদের কিছু জানাননি। কিন্তু আমরা প্রস্তুত আছি। তারা যখনই বলবেন আমরা রফতানি কার্যক্রম শুরু করতে পারব।
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, করোনার কারণে রফতানির পরিমাণ অনেক কমেছে। এছাড়া চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাত্রী পারাপারও বন্ধ রয়েছে। এতে করে সরকার প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আজিজুল সঞ্চয়/এএম/এমকেএইচ