যশোরে ১৭টি এলাকাকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে যশোরে ৬টি উপজেলার ১৭টি এলাকাকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করেছে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা হতে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এসব এলাকা ‘কঠোর বিধি-নিষেধের’ আওতায় থাকবে।
সোমবার দুপুরে জেলা করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভা শেষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে।
যশোর জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানায়, সোমবার পর্যন্ত জেলায় মোট ২২৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একজন। আর সুস্থ হয়েছে ১০১ জন। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে জেলার রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনসমূহ নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলায় রেড জোন এলাকাগুলো হলো, যশোর সদর উপজেলার যশোর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড, আরবপুর ও উপশহর, অভয়নগর উপজেলার চলিশিয়া, পায়রা, বাঘুটিয়া ইউনিয়ন, অভয়নগর পৌরসভার ২, ৪, ৫, ৬ ও ৯ ওয়ার্ড, চৌগাছা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড, শার্শা উপজেলার শার্শা, পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড, ঝিকরগাছা পৌরসভার ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ড, কেশবপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড।
ইয়োলো (হলুদ) জোনসমূহ হলো, যশোর পৌরসভার ৬, ৭, ৮ নম্বর ওয়ার্ড, সদরের কাশিমপুর, ফতেপুর ইউনিয়ন, মণিরামপুর উপজেলার খেদাপাড়া, ঝাঁপা, কাশিমনগর ইউনিয়ন, অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ, শ্রীধরপুর, শুভরাড়া ইউনিয়ন ও পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি, বাঁকড়া ইউনিয়ন, চৌগাছা উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়ন, বাঘারপাড়া উপজেলার বাসুয়াড়ী ও কেশবপুর উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়ন। এছাড়া জেলার ১২১টি জায়গাকে সবুজ জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রেড জোন এলাকায় সব ধরনের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হলো। সকল জনসাধারণ আবশ্যিকভাবে নিজ নিজ আবাসস্থলে অবস্থান করবেন।
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি গাড়ি চলাচলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হবে। অ্যাম্বুলেন্স, রোগী পরিবহন, যানবাহন, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তির পরিবহন, কোভিড-১৯ মোকাবিলা ও জরুরি পরিসেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের গাড়ি, জরুরি সংবাদকর্মীর গাড়ি প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল সেবামূলক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। সকল প্রকার স্কুল, কলেজ, কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকেব। সকল হাসপাতাল, চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও কোভিড-১৯ মোকাবিলায় পরিচালিত ব্যাংকিং সেবা এর আওতার বাইরে থাকবে।
জরুরি প্রয়োজনে বের হলে সকলকে আবশ্যিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ও যথাযথভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে।এছাড়া প্রকাশ্য স্থানে বা গণজমায়েত করে কোনো প্রকার ত্রাণ, খাদ্য সামগ্রী বা অন্য কোনো পণ্য বিতরণ করা যাবে না।
যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ জানান, জেলার আটটি উপজেলাকে ইউনিয়ন ভিত্তিক এবং পৌরসভায় ওয়ার্ড ভিত্তিক করোনা সংক্রমণের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে এই তিনটি রং দ্বারা বিভাজন করা হয়েছে। বিভাজনে যে ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড করোনায় খুব বেশি সংক্রমিত বলে তথ্য রয়েছে, সেগুলোকে 'রেড জোন' বা লাল চিহ্নিত এলাকা, যে ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড মাঝারি পর্যায়ে সংক্রমিত বলে তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলোকে 'ইয়লো জোন' বা হলুদ চিহ্নিত এলাকা এবং যে ইউনিয়ন বা ওয়ার্ডে করোনা একেবারে সংক্রমিত হয়নি সেগুলোকে নিরাপদ রাখতে গ্রিন জোন বা সবুজ চিহ্নিত এলাকা হিসেবে বিভক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জোনভিত্তিক ব্যবস্থাপনার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।আশা করা হচ্ছে, মঙ্গলবার সকাল থেকে সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে। এছাড়া রেড জোন ঘোষিত এলাকার জরুরি কাজ ছাড়া কোনো ব্যক্তি ঘর থেকে বের হতে পারবেন না। এলাকার কেউ বাইরে কিংবা বাইরের কেউ ওই এলাকায় আসা-যাওয়া করতে পারবেন না। তবে জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা এর আওতামুক্ত থাকবে। এসকল নিদের্শনা কেউ না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মিলন রহমান/এমএএস/পিআর