বাংলাদেশ-ভারত চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী পারাপার শুরু হবে কবে?

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ০৫:২০ পিএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট

অডিও শুনুন

মহামারি করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে আগের মতো আতঙ্ক খুব একটা লক্ষ্য করা যায় না। জনজীবন এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। প্রায় ছয় মাস সময় ধরে বন্ধ থাকা আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাত্রী পারাপার কার্যক্রম এখনও স্বাভাবিক হয়নি। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত ভারত ও বাংলাদেশের চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী পারাপার কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে দিনে কয়েক কোটি টাকার পণ্য রফতানি হতো ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায়। আগরতলা থেকে এসব পণ্য সরবরাহ করা হতো দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে রফতানির পরিমাণ কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর রফতানি বাণিজ্যে ধস নেমেছে। বর্তমানে দিনে অর্ধকোটি টাকা মূল্যের পণ্য রফতানি হচ্ছে ভারতে।

আখাউড়া স্থলবন্দরটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভারতে শুধু পণ্য রফতানি হচ্ছে। আমদানি না করায় শুধু পণ্য রফতানি থেকে আসা বৈদেশিক মুদ্রার রেমিট্যান্স পায় সরকার। আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট থেকে যাত্রীদের দেয়া ভ্রমণকর বাবদ প্রতি মাসে কোটি টাকা আয় হয় সরকারের। প্রতিদিন অন্তত আড়াই লাখ টাকা যায় সরকারের কোষাগারে।

এই চেকপোস্ট দিয়ে গড়ে প্রতিদিন পাঁচশ যাত্রী ভারতে গমন করেন। প্রত্যেক যাত্রীকে পাঁচশ টাকা করে ভ্রমণকর দিতে হয়। বিভিন্ন উৎসবের সময় প্রতিদিন এক হাজারের বেশি যাত্রী গমন করেন ভারতে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে ১২ মার্চ থেকে বাংলাদেশি যাত্রীদের ভারতে প্রবেশ বন্ধ করে দেয় আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট কর্তৃপক্ষ। শুধু কূটনীতিক, অফিসিয়াল, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন প্রকল্পের ভিসাধারীদের যাতায়াত সুবিধা রেখে বাকি সব ধরনের ভিসাধারীদের প্রবেশাধিকার বলবৎ রাখা হয়।

চেকপোস্টে ঝুলানো এক নোটিশে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত যাত্রী পারাপার বন্ধ রাখার কথা উল্লেখ করা হলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি যাত্রীদের ভারতে প্রবেশাধিকার দেয়া হচ্ছে না। কবে নাগাদ যাত্রী পারপার স্বাভাবিক হবে সেটিও জানানো হচ্ছে না আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কর্তৃপক্ষকে। বর্তমানে দুই দেশের চেকপোস্ট ব্যবহার করে শুধু আটকা নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরতে দেয়া হচ্ছে।

আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের দেয়া তথ্যমতে, জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছেন ১৪ হাজার ১৪৩ জন, আর ভারত থেকে বাংলাদেশ এসেছেন ১০ হাজার ৯৪৩ জন যাত্রী। এর বিপরীতে সরকার ভ্রমণকর পেয়েছে ৭০ লাখ ৭১ হাজার ৫০০ টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত গমন করেছেন ১৪ হাজার ৩৭৩ জন, ভারত থেকে এসেছেন ১১ হাজার ৮৪৭ জন। ওই মাসে সরকারের আয় হয়েছে ৭১ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা।

মার্চ মাসে ভারতে গেছেন সাত হাজার ১১৯ জন ও বাংলাদেশে এসেছেন পাঁচ হাজার ৯৪৪ জন। মার্চ মাসে সরকারের কোষাগারে গেছে ৩৫ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা। এপ্রিল মাসে ভারতে কোনো যাত্রী গমন করেননি, শুধুমাত্র ৮৭ জন ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন। ফলে এপ্রিল মাসে সরকারের কোনো আয় হয়নি। মে মাসে বাংলাদেশে আটকা পড়া ১০৫ জন যাত্রী ভারতে ফিরে গেছেন, আর ১৯৩ জন বাংলাদেশি নিজ দেশে ফেরেন। ওই মাসে সরকার মাত্র ৫২ হাজার ৫০০ টাকা ভ্রমণকর পেয়েছে। জুন মাসে বাংলাদেশে আটকা পড়া ২২৯ জন যাত্রী ভারতে ফিরে গেছেন। তাদের কাছ থেকে এক লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টাকা ভ্রমণকর আদায় করা হয়ছে।

আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুলিশের ইনচার্জ ও উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হামিদ বলেন, কখন থেকে যাত্রী পারপার স্বাভাবিক হবে সে সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এ বিষয়ে আমাদের স্পষ্ট করে এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট কর্তৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের উপ-কমিশনার কাজী ইরাজ ইশতিয়াক বলেন, আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হয়। কিন্তু যাত্রী পারাপারের বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত যাত্রী পারাপার শুরুর কোনো সম্ভাবনা নেই।

আজিজুল সঞ্চয়/এএম/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।