বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়ার স্বপ্ন দেখা ছেলেটি আজ পরিবারের বোঝা
মো. মাহফুজ। বয়স ১৬। ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের চর ভেদুরিয়া গ্রামের জেলে মো. ফয়েজ উদ্দিনের ছেলে। পড়াশোনা করে বিনা পয়সায় দেশের গরিব মানুষের চিকিৎসা করার স্বপ্ন দেখত মাহফুজ। কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি সড়ক দুর্ঘটনা। পঙ্গু হয়ে এখন সে পরিবারের বোঝা।
মাহফুজের চিকিৎসা করাতে গিয়ে জমি ও বসতভিটা বন্ধক রেখে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ করে এখন তিন বেলা খাবার জোটে না পরিবারের। দেনাদারদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বাবা। তবুও বাবার ইচ্ছা ছেলেকে সুস্থ করে তোলা।
মাহফুজের পরিবারের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১০ রমজান দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয়ে এলাকার মসজিদে কোরআন শরিফ পড়ার জন্য রাস্তা পার হচ্ছিল মাহফুজ। ওই সময় একটি দ্রুতগামী যাত্রীবাহী ব্যাটারিচালিত বোরাক তাকে চাপা দেয়। এতে তার দুই পা ভেঙে যায়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় দ্রুত ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাকে ওইদিনই বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরে তার অবস্থার কোনো উন্নতি না হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ডা. ফখরুল আমিনের অধীনে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিলে বাম পা কোনো রকম ভালো হলেও ডান পায়ের হাড় ভেঙে যাওয়ায় এখনও সুস্থ হতে পারেনি সে। বর্তমানে অর্থের অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছে না। চিকিৎসক বলেছেন, ৩ লাখ টাকা খরচে কৃত্রিম হাড় সংযোগ করা গেলে মাহফুজ আবারও স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারবে।
মো. মাহফুজ জানায়, ‘আমি ছোট থেকেই দেখেছি বাবা-মা না খেয়ে আমাদের ভাই বোনদের খাইয়েছেন। আমাদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছেন। আমি বড় হয়ে একজন ডাক্তার হয়ে দেশের গরিব মানুষকে বিনা পয়সায় চিকিৎসা করতে চাই। কিন্তু সব স্বপ্ন এখন শেষ হতে বসেছে। একটি দুর্ঘটনা আমাদের পরিবারের সব শেষ করে দিয়েছে। আমার চিকিৎসার জন্য বাবা অনেক টাকা দেনা করেছেন। এখন আমার চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এমনকি মাঝে মাঝে লবণ দিয়ে ভাত খেয়েও জীবন কাটাচ্ছি। আমি বাবা-মার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই। পড়াশোনা করতে চাই। এজন্য দেশের ভালো মানুষগুলো যদি আমাকে সহযোগিতা করে তাহলে তাদের কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।’

মাহফুজের বাবা মো. ফয়েজ উদ্দিন জানান, তিন ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। জেলের কাজ করে কোনো রকমে জীবন কাটাতেন তিনি। পয়সার অভাবে বড় ছেলে সবুজ ও ছোট ছেলে ফিরোজ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়তে পেরেছে। মেজ ছেলে মাহফুজ স্থানীয় উত্তর চর ভেদুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি ও ছোট মেয়ে সাথি বেগম স্থানীয় বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করলেও বর্তমানের টাকার অভাবে তা বন্ধ হতে বসেছে। এর মধ্যে মাহফুজের চিকিৎসার জন্য তিনি তার বাবার রেখে যাওয়া ৮ শতাংশ জমি বিক্রি ও বসতঘর বন্ধকসহ বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন, যা এখনও পরিশোধ করতে পারেননি।
তিনি আরও জানান, ডা. ফখরুল আমিন বলেছেন আরও ৩ লাখ টাকা খরচ করে একটি কৃক্রিম হাড় লাগাতে পারলে মাহফুজ আবার আগের মতো হাঁটাচলা করতে পারবে। কিন্তু সেই টাকা জোগাড় করা তার জন্য অসম্ভব। এ জন্য তিনি মাহফুজের চিকিৎসার জন্য দেশের মানুষের কাছে হাত বাড়িয়েছেন।
ভোলা সদর উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, ওই পরিবারটি আমাদের কাছে কখনও আসেনি। মাহফুজের পরিবার আমাদের কাছে আবেদন করলে হয়তো সরকারিভাবে ১০-১৫ হাজার টাকা সহযোগিতা পেতে পারে।
জুয়েল সাহা বিকাশ/এফএ/এমকেএইচ