সপ্তাহের ব্যবধানে রামেকে করোনার টেস্ট বেড়েছে দ্বিগুণ
সোমবার থেকে লকডাউন। তার আগেই রামেকে দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়েছে করোনার টেস্ট। এক সপ্তাহ আগেও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) ভাইরোলজি আর্টিফিসিয়াল করোনা ল্যাবের ২টি পিসিআর মেশিনে ১০০ থেকে ১৫০টি নমুনা পরীক্ষা হত, সেখানে বর্তমানে হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০টি নমুনা পরীক্ষা।
শনিবার (০৩ এপ্রিল) বিকেলে রামেকের ভাইরোলজি আর্টিফিসিয়াল করোনা ল্যাবের ইনচার্জ প্রভাষক ডা. শাহিন আক্তার রনি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ভাইরোলজি ল্যাবে ২টি পিসিআর মেশিন রয়েছে। ১৫-২০ দিন আগেও ২ ব্যাচে ১৮৮টি নমুনা ফলাফল দেওয়া হত। কিন্তু বর্তমানে ৪ ব্যাচে ৩৭৬টি পর্যন্ত নমুনা ফলাফল দেওয়া হচ্ছে।
যারা রাজশাহী সিটির স্থানীয় ও রামেকে ভর্তি হয়েছেন তারাই মূলত রামেকের ল্যাবে করোনা টেস্ট করতে পারছেন। অন্যথায় অন্যান্য উপজেলা ও জেলার বাসিন্দারা নিজ নিজ এলাকায় করোনার নমুনা সংগ্রহকারীর নিকট নমুনা প্রদান করবেন বলেও জানান তিনি।
নিজ নিজ জেলা ও উপজেলায় করোনার নমুনা ব্যবস্থাপনার বিষয়টি জানতে চাইলে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, সরকার কর্তৃক সিভিল সার্জনের মাধ্যমে যখন নির্দেশ প্রদান করা হলো- করোনা আক্রান্ত রোগী বা করোনা উপসর্গ যে ব্যক্তির মাঝে দেখা দেবে তিনিই শুধুমাত্র ওই এলাকায় নমুনা দেবেন। সেখান থেকে রামেকে আসবে নমুনা। প্রথমদিকে এই নিয়ম অনুসরণ করায় ভালোই চলছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে দু’একজন ব্যক্তির নমুনা আসায় উপজেলার নমুনা সংগ্রহকারীরাও বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন। এক নমুনার ক্ষেত্রেও যে কাজ, দশ নমুনার জন্যও একই।
তিনি বলেন, অনেক সময় উপজেলার নমুনা সংগ্রহকারীরা ৫-৭ দিন পর নমুনা রামেকে নিয়ে আসতেন। এতে বিপদ দু’দিক থেকেই ছিল। প্রথমত নমুনাটি পরীক্ষার উপযোগিতা হারিয়ে ফেলত, দ্বিতীয়ত করোনার ফলাফল প্রার্থীরাও বিশ্বাস রাখতে পারতেন না। যার কারণে রামেকের ল্যাবে প্রচুর পরিমাণে বর্তমানে চাপ পড়ে গেছে, করোনার নমুনা টেস্ট বেড়েছে দ্বিগুণ।
এদিকে ভাইরোলজি আর্টিফিসিয়াল করোনা ল্যাবের ল্যাব টেকনোলজিস্ট মাসুদ করিম বলছেন, রামেকে পূর্বের তুলনায় বর্তমানে চাপ অনেক বেশি। কারণ, রামেকে করোনা টেস্টে মাত্র ১০০ টাকা ফি লাগে। অন্যদিকে রূপপুর ল্যাবে নেয় ৩৫০০ টাকা। আবার সরকারি ভিসা বা বিদেশগামীদের টেস্টের জন্য লাগে ১৫০০ টাকা। তাই অনেকে করোনার টেস্টের জন্য রামেকে এসে ভিড় জমান। সিভিল সার্জনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজ নিজ এলাকা ছাড়া অন্য কেউ করোনার নমুনা প্রদান বা টেস্ট করতে পারবে না। তাই জটিলতা এড়াতে তাদের ফেরত পাঠানো হয়।
তিনি জানান, একটি পিসিআর মেশিনে একবারে ৯৪টি নমুনা রান করানো হয়। কিন্তু রামেকের ল্যাবে রয়েছে দুটি মেশিন, এ দুই মেশিনে চারবারে ৩৭৬টি নমুনা রান করানো হয়। এর বেশি রান করতে গেলে পর্যায়ক্রমে রান করতে হবে। পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় তা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে প্রভাষক শাহিন আক্তার বলেন, রাজশাহী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এ পাঁচটি জেলা থেকে প্রতিদিন নমুনা আসে রামেক ল্যাবে। আবার রাজশাহী বিভাগের মধ্যে যারা বিদেশ যায়, তাদের নমুনা টেস্ট করা হয়। এমন বিদেশগামী ১০০ জনের নমুনা প্রতিদিন টেস্ট করা লাগে। এরমধ্যে কয়েকদিন আগেই সর্বোচ্চ ১৭৬টি নমুনা একদিনে টেস্ট করা হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের জনবল কম।
ল্যাবে মোট ১২ জন ডাক্তার, ৮ জন টেকনোলজিস্ট, ৫ জন ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট, নমুনা সংগ্রহকারী ২ জন ও ওয়ার্ডবয় আছে একজন। এই ক্ষুদ্র জনবল দিয়ে আড়াই থেকে তিনশ টেস্টের ফলাফল প্রদান করা হয়।
রামেক হাসপাতালে আরও একটি মেশিন রয়েছে, সেটি বন্ধ পড়ে আছে। মেশিনটি চালু করার ব্যবস্থা করলে প্রতিদিন অন্তত ১৮৮টি নমুনার প্রতিদিন পরীক্ষা করা যেত। এতে যেমন নমুনা পেন্ডিং থাকত না, আবার দিনের রিপোর্ট দিনেই প্রদান করা সম্ভব হত বলেও জানান তিনি।
তবে করোনা টেস্টের চাপ তেমন নেই জানিয়ে রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার বলছেন, আমরা প্রতিদিনের রিপোর্ট প্রতিদিনই দিচ্ছি, কোনো রিপোর্ট পেন্ডিং নেই। আজও (শনিবার) ২৭৫টি রিপোর্ট প্রদান করেছি।
বন্ধ থাকা পিসিআর মেশিন ও জনবলের অপর্যাপ্ততার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বন্ধ থাকা মেশিন চালু হবে, না কি পড়ে থাকবে সেটি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিষয়। তাদের যদি চাহিদা থাকে তবে তারা ঠিক করবে এবং চালাবে। তবে ভবিষ্যতে তেমন পরিস্থিতি হলে অবশ্যই সরকার তেমন কোনো কথা বলবে। আমরা নানান সময়, নানান মিটিং করি। ভবিষ্যতে মিটিংয়ে এ বিষয়গুলোও তোলা হবে।
এফএ/এমএস