৮ দিনের মেয়েকে নিয়ে ফেরিতে উঠতে লিপি বেগমের দীর্ঘ অপেক্ষা
মাঝ দুপুরে সূর্য মধ্যগগনে। রোদের তাপে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়াঘাটে তখন প্রচণ্ড গরম। এরইমধ্যে ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় ট্রাকে আটদিন বয়সী নবজাতককে নিয়ে প্রহর গুনছেন মা লিপি বেগম।
অসহ্য গরমে অঝোরে কেঁদেই চলছে শিশু ইয়াসমিন। নিরূপায় মা লিপি কোলে নিয়ে সন্তানের কান্না বন্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে বৃথা হচ্ছে বারংবার। সকাল থেকে অপেক্ষা করেও দীর্ঘ ৭ ঘণ্টাও ফেরিতে উঠতে পারেনি তারা।
কথা বলে জানা যায়, সাতদিন আগে ইটভাটার শ্রমিক মিরাজ-লিপির ঘর আলো করে জন্ম নিয়েছে ইয়াসমিন। মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের বালুরচরের ইটভাটায় কাজ করতেন তারা। তবে লকডাউনে সবকিছু বন্ধের ঘোষণায় মালিকপক্ষ না করে দিয়েছে তাদের। এ অবস্থায় কর্মহীন স্বামী আর শাশুড়ির সঙ্গ শ্বশুরবাড়ি বরগুনার আমতলি ফিরছেন লিপি। এ যাত্রার মাঝে দিতে হবে পদ্মা পাড়ি। তাই ট্রাকে করে মঙ্গলবার দুপুরে শিমুলিয়া ঘাটে এসেছেন তারা। তবে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টায়ও ফেরিতে উঠত না পে ঘাটেই অবস্থানে করতে হচ্ছে তাদের। তীব্র গরম আর ফেরিতে ওঠার দীর্ঘ অপেক্ষায় চরম ভোগান্তিতে পড়ছে পরিবারটি।
শিশুটির দাদি রহিমা বেগম বলেন, ‘ইটখোলার মালিককে বলে থাকতে চেয়েছিলাম। তবে মালিক রাখবে না বলে দিয়েছে। বলেছে যারযার স্থানে চলে যেতে। লকডাউনের কারণে আমাদের বাড়ি যেতে হচ্ছে। এখনতো গাড়ি ছাড়ে না কি করব। আমাদের তো অন্যভাবে যাওয়ার ব্যবস্থা নাই।’
লিপি বেগম বলেন, ‘প্রচণ্ড গরম আমরাই তো সহ্য করতে পারছি না। পোলাপাইন কেমনে পারব। সকাল ৮টা বাজে আসছি, এখনো ফেরিতে উঠতে পারি নাই। ফেরিতে উঠতে পারলে আমরা বাড়িত যেতে পারতাম।’
১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউনকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকাল থেকেই যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় শিমুলিয়া ঘাটে। গণপরিবহন বন্ধ থাকার নির্দেশনায় লঞ্চ বন্ধে বাড়তি চাপ পড়েছে ফেরিগুলোতে। এতে ভোগান্তিতে হাঁপিয়ে উঠতে দেখা যায় অনেক যাত্রীকেই।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের উপ-মহাব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘লঞ্চ আর স্পিড বোট বন্ধে ফেরিতে অত্যাধিক চাপ পড়েছে। তবে নিয়ম ও সিরিয়াল অনুযায়ী সবাইকে পারাপারের চেষ্টা করা হচ্ছে। অচিরেই সব গাড়ি পার হয়ে যাবে।’
আরাফাত রায়হান সাকিব/এসজে/এমকেএইচ