থেমে নেই নায়েক সফির মানবিক টিম সিলেট
দেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে অসহায় হয়ে পড়া শিক্ষার্থী ও হতদরিদ্র মানুষের সাহায্য কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে ‘মানবিক টিম সিলেট’। খাদ্যসামগ্রী ও করোনা সচেতনতায় মাস্ক আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণে সীমাবদ্ধ নয় এই সংগঠনটি।
অসহায় শিক্ষার্থীদের খরচ বহন, করোনায় আক্রান্তদের প্লাজমা ও রক্ত দেয়া, মৃতদের দাফন-কাফন, আবার বিনা খরচে ওষুধ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাসাবাড়ি অথবা হাসপাতালে পৌঁছে দেয়ারও কাজ করছে তারা। এসব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন সিলেট মহানগর পুলিশের নায়েক মো. সফি আহমেদ।
এদিকে, গত এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ শেষে ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউনে যাচ্ছে দেশ। করোনার সংক্রমণের কারণে সিলেটে কর্মহীন হয়ে পড়ায় নিম্নবিত্ত তো বটেই মধ্যবিত্তরাও সঙ্কটে পড়েছেন। কারও কাছে হাত পাততেও পারছেন না অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে দিনরাত সিলেটের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে চলেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের নায়েক সফি আহমেদ ও তার টিম। সাধ্যমতো সহায়তা তুলে দিচ্ছেন দুর্দশাগ্রস্ত পরিবারের হাতে।
অনেকটা নীরবে তিনি এ তৎপরতা চালালেও এরইমধ্যে তিনি ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন অসহায় মানুষদের কাছে। মানবিক টিম সিলেটের মাধ্যমে তিনি এই কার্যক্রম চালাচ্ছেন। নায়েক মো. সফি আহমেদ বর্তমানে সিলেট মহানগর পুলিশের মিডিয়া ও কমিউনিটি সার্ভিস বিভাগে কর্মরত আছেন।
মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে সিলেট নগরের ঘাসিটুলা এলাকায় ইউসেপ ঘাসিটুলা স্কুলের সুবিধাবঞ্চিত বেশ কয়েকজন এতিম শিক্ষার্থীর মধ্যে চার কেজি করে চাল, ১ লিটার তেল, ১ কেজি ডাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি পেঁয়াজ, আধা কেজি ছোলা, আধা কেজি মুড়ি, ৩০০ পিস মাস্ক, ৬০ পিস সাবান বিতরণ করেছে মানবিক টিম সিলেট। স্কুলের সহকারী শিক্ষক শাহিদা জামানের তত্ত্বাবধানে বিকেল ৫টায় এসব খাদ্যসামগ্রী ও মাস্ক ও সাবান বিতরণ করা হয়। এমন সহায়তা পেয়ে খুশি অসহায় শিক্ষার্থীরাও।
এতে সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণে আর্থিক সহযোগিতা করেন পুলিশের নায়েক সফি আহমদ ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণে আর্থিক সহযোগিতা করেন মানবিক টিমের শুভাকাঙ্ক্ষী নারী উদ্যোক্তা চৌধুরী জান্নাত রাখি।
এ সময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ, ইউসেপ স্কুল ঘাসিটুলার শিক্ষিকা শাহিদা জামান, মানবিক টিম সিলেটের প্রধান সমন্বয় মো. সফি আহমেদ, মানবিক টিম সিলেটের সদস্য রবিউল ইসলাম রবি।
পুলিশের নায়েক মো. সফি আহমেদ বলেন, ‘আমার রেশনের খাদ্যসামগ্রী, বেতন ও বোনাসের টাকা একাজে ব্যয় করছি। এছাড়া সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার থেকে শুরু করে বেশিরভাগ সিনিয়র কর্মকর্তারা এ কার্যক্রমে আমাকে উৎসাহ ও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছেন। পাশাপাশি প্রবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষজনও আমাকে এমন কাজে সহায়তা করছেন। সবার সহযোগিতা নিয়েই মানবিক টিম সিলেট তার কার্যক্রম চালাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী ১৬ জনের মরদেহ দাফন-কাফনে কাজ করছ মানবিক টিম সিলেট। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ১০১ জন ডোনারের মাধ্যমে প্লাজমা দান করা হয়। করোনা পরিস্থিতিতে এতিমখানার বাচ্চাদের প্রায় ৫০ দিনের অধিক রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ি গিয়ে যেকোনো ধরনের জিনিসপত্র ডেলিভারি (সার্ভিস চার্জ ছাড়া) ৪০ জনকে সহযোগিতা করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে অসহায়, হতদরিদ্র, ও ছিন্নমূল মানুষদের প্রায় ১০০ জনকে (ওষুধ, আর্থিক ও সেচ্ছাসেবী) চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে রক্তের প্রয়োজন এমন ৮০০ জন রোগীকে রক্তের ব্যবস্থা করে দিয়েছি আমরা।’
ছামির মাহমুদ/এসজে/এমকেএইচ