‘আপনারা স্বাস্থ্যবিধি মানলে আমরা একটু বিশ্রাম পাব’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক রংপুর
প্রকাশিত: ০৩:১৯ এএম, ২১ এপ্রিল ২০২১

রংপুরের ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতাল চালুর এক বছর পূরণ হয়েছে মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল)। দীর্ঘ এক বছরের কার্যক্রম তুলে ধরার পাশাপাশি নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ডা. এস. এম নূরুন নবী।

ভালোলাগা, ভালোবাসা আর শঙ্কার কথা তুলে ধরে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক লিখেছেন, কোভিড-১৯ রোগী ভর্তির এক বছর পূর্ণ হয়েছে মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল)। এক বুক আশঙ্কা আর প্রত্যয় নিয়ে ২০২০ সালের ৩১ মার্চ কোভিড-১৯ মোকাবিলার কাজ শুরু করেছিলাম।

আমার সাথে ধীরে ধীরে যুক্ত হয় কিছু অকুতোভয় চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী। শূন্য থেকে শুরু করে এই হাসপাতাল সাজাতে আমরা হাতে সময় পেয়েছিলাম মাত্র ১৯ দিন। সবার সর্বাত্মক সহযোগিতায় ২০২০ সালের ২০ এপ্রিল প্রথম রোগী ৮৫ বছরের মোসলেম উদ্দিন ভর্তি হন।

আল্লাহর অশেষ রহমতে সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যে গত ১ বছরে আমরা এক হাজার রোগীকে সুস্থ অবস্থায় তাদের পরিবারের নিকট ফিরে যাবার উপলক্ষ্য হয়েছি।

jagonews24

গত ১ বছরে যা অর্জন করেছি তা হলো আত্মবিশ্বাস আর মানুষের জন্য ভালো কিছু করার অভিপ্রায়। আমাদের যাত্রা সহজ ছিলো না, এখোনা নয়।

গত জানুয়ারিতে রোগী ভর্তির সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে গিয়েছিলো। ভেবেছিলাম আমরা হয়তো মহামারি থেকে মুক্তি পেতে চলেছি, আমি আমার মুল কর্মস্থল শিশু বিভাগ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাজ শুরু করি।

জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখে আমার অভিভাবক রংপুর মেডিকেল কলেজের সুযোগ্য অধ্যক্ষ অধ্যাপক একেএম নুরুন্নবী লাইজু আমাকে শিশু বিভাগের একটি ইউনিটের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালনের আদেশ প্রদান করেন। সেই থেকে শিশু বিভাগে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি করোনা হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছি।

jagonews24

করোনা হাসপাতালে আমি এমন একটি টিমকে নেতৃত্ব দেই যাদের সংস্পর্শে না আসলে আমার জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যেতো, ঠিক যেমন করোনা না আসলে আমি আমাকে কোনোদিন চিনতাম না। ওদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই, মহান সৃষ্টিকর্তা ওদেরকে উত্তম বদলা দেবেন। ওরা কী পরিমাণ কষ্ট করে দায়িত্ব পালন করে এটা সহজে কাউকে বোঝানো যাবে না।

আমরা বর্তমানে সর্বোচ্চ সংক্রমণ এবং সর্বোচ্চ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমার টিম আগের মতই দৃঢ়সংকল্প এ মহামারিকে আমাদের হঠাতেই হবে। আমাদের জন্য দোয়া চাইছি, আমরা যেন সবাই মিলে এ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করতে পারি, খুব শিঘ্রই যেন আমাদের সন্তানরা স্কুলে যেতে পারে, অথর্নীতির চাকা যেন সচল থাকে, প্রধানমন্ত্রী যেন হাসিমুখে শেষ দিন পর্যন্ত নেতৃত্ব দিয়ে যেতে পারেন।

আপনারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই এটা সম্ভব। আমরা আর কোনো প্রিয়জনকে হারাতে চাই না। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি পুলিশ, প্রশাসনের লোকজন দিনরাত পরিশ্রম করছেন, তাদেরকে সহযোগিতা করুন।

jagonews24

আপনি স্বাস্থ্যবিধি মানলে আমরা একটু বিশ্রাম পাবো। সবাই ভলো থাকুন, নিরাপদ থাকুন।

হাসপাতাল সূত্রমতে, এক বছরে ১ হাজার ৫৯ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১ হাজার জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। আর মৃত্যুবরণ করেছেন ১০২ জন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর রংপুুুরে শিশুদের জন্য নির্মিত উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি গত বছরের ১৯ এপ্রিল থেকে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতে থাকে। এর এক বছর পর মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) হাাসপাতালের মোট পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে।

এতে দেখা যায়, এছাড়া এক বছরে ২০ জনকে অন্যত্র রেফার্ড করা হয়েছে। সেখানে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৭ জন। মৃত্যুহার বলা হয়েছে ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ৯০ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।