খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন রাজশাহীর মোটরশ্রমিকরা
রাজশাহীর প্রায় ২০ হাজার পরিবহন শ্রমিক টানা লকডাউনে আয়শূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে খেয়ে না খেয়ে পরিবার নিয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে জানা গেছে।
গণপরিবহণ সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, জমানো টাকা যা ছিল তা দিয়ে লকডাউনের শুরুতে মাত্র কয়েকদিন পার হয়েছে। এখন ধার-দেনা করে কোনো রকম দিন পার করতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাস মালিক সমিতির কয়েকজন জানান, একটি বাস চললে মালিক ছাড়াও চালক, সুপারভাইজার, কন্ডাক্টর আর হেলপারের প্রয়োজন হয়। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ওয়েবিল লেখা কর্মী, চেকার ও সুপারভাইজার।রাজশাহীতে এসব শ্রমিকই রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার। আর পরিবহনটি ঘিরে পেট চালান কমপক্ষে আরও ১০ ধরনের শ্রমিক।
শুধু তাই নয়, সৌন্দর্যবর্ধন থেকে শুরু করে পরিবহনের ছোট্ট একটি যন্ত্রাংশ মেরামতে যুক্ত রয়েছে আরও কিছু শ্রমিক।গ্রিজ মিস্ত্রি, ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি, অটোপার্টেস দোকানি থেকে শুরু করে মেরামতকারীসহ বিভিন্ন ধরনের শ্রমিকরা যুক্ত রয়েছেন পরিবহন খাতে।
রাজশাহী জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য বাসচালক সুমন আহমেদ বলেন, ‘আমরা দিন আনি দিন খাই। জমানো টাকা বলতে কিছু নেই।লকডাউন আরও বাড়লে কী খাব, কী করব, তা ভেবে পাচ্ছি না।’
বাসের হেলপার আবির হোসেন বলেন, ‘বাস চললেই আমাদের পেট চলে। বাস বন্ধ, আয় রোজগারও বন্ধ। গতবার অনেকেই সাহায্য অনুদান দিয়েছিলেন। এবার কারও কোনো সাড়া নেই।এবার লকডাউনে সবকিছু বন্ধ, বাকি দিনগুলো কীভাবে চলবে আল্লাহই ভালো জানেন।’
মহানগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকার গ্রিজ মিস্ত্রি রাজন বলেন, ‘গাড়ি চললে কাজ পাই। তা দিয়েই চলত সংসার। টানা লকডাউনে গাড়ি বন্ধ। তাই ইনকামও বন্ধ।কীভাবে পরিবারের খাবার যোগাবো সেটা মাথায় আসছে না।’
এদিকে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে গণপরিবহন চালুর দাবিতে রোববার (২ মে) সারাদেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন সড়ক পরিবহন শ্রমিকরা। শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী জানান, মোটরশ্রমিকদের অবস্থা বর্ণনা করার মতো নেই। সবমিলে একটা বাজে অবস্থায় দিন পার হচ্ছে।
পরিবহন চালুর পক্ষে সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, লকডাউনে মার্কেট খোলা। তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন চললে সমস্যা কোথায়? স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে মানুষের ভোগান্তি যেমন কমবে, তেমনি শ্রমিকরাও দু’বেলা খাওয়ার টাকাটা জোগাড় করতে পারবে।
ফয়সাল আহামেদ/এএইচ/এমএস