কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভারতফেরতদের অসন্তোষ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিপর্যস্ত ভারত থেকে দেশে ফেরা নাগরিকদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়নের ফলে কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ বাড়ছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন যশোরের হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ভারতফেরতরা। তাদের সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন হোটেলে দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, ভারতফেরতদের জন্য নতুন নির্দেশনায় করোনা টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনের পর ১৫তম দিনে তাদের নমুনা নেয়া হবে। নমুনা টেস্টের রিপোর্ট আসার পর তাদের বাড়ি ফেরার অনুমতি দেয়া হবে। ফলে তাদেরকে ১৪ দিনের বেশি হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে। যা নিয়ে ক্ষোভ জানাচ্ছেন ভারতফেরত যাত্রীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভারতে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়া সরকার গত ২৬ এপ্রিল থেকে ভারতের সঙ্গে দেশের সব সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। তবে ওইদিন থেকে দূতাবাসের বিশেষ অনুমতি নিয়ে দেশে ফেরার সুযোগও দেয়া হয়। ওইদিন থেকে যারা দেশে ফিরেছেন এবং যাদের করোনা নেগেটিভ সনদ আছে, তাদের নিজ খরচে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে। আর যারা করোনা পজেটিভ তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।
সূত্রমতে, গত ২৬ এপ্রিল থেকে ১৪ মে পর্যন্ত যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরেছেন দুই হাজার ৭৭৮ জন। তাদেরকে যশোরসহ পার্শ্ববর্তী পাঁচ জেলায় প্রাতিষ্ঠনিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। ফিরে আসাদের মধ্যে যশোরে ছিলেন এক হাজার ২৬৫ জন। তাদের মধ্যে বাড়ি ফিরে গেছেন ৬৩১ জন। এখনো এই জেলায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৬৩৪ জন।
আগের নির্দেশনা অনুযায়ী, শুক্রবার (১৪ মে) পর্যন্ত ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষে ভারতফেরতরা করোনা পরীক্ষা ছাড়াই বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু নতুন নির্দেশনার পর সেটি আর সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী কোয়ারেন্টাইনে থাকাদের ১৫তম দিনে নমুনা নেয়া হবে এবং রিপোর্ট আসার পর তাদের ছাড়া হবে। শনিবার এ সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টারগুলোতে টানিয়ে দেয়া হয়।
এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই নোটিশ জারির পর ক্ষোভে ফুঁসছেন যশোরের বিভিন্ন হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ভারতফেরত যাত্রীরা।
কোয়ারেন্টাইনে থাকা ভারতফেরত কয়েকজন অভিযোগ করেন, নেগেটিভ সনদ থাকার পরও তাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। এটা কাম্য নয়। ভারত থেকে ফেরার পর হাতশূন্য। এ অবস্থায় নিজ খরচে হোটেলে থাকা কষ্টসাধ্য।
তাদের দাবি, প্রয়োজনে এক-দু’দিন আগে নমুনা নিয়ে নির্ধারিত দিনেই রিপোর্ট দিয়ে তাদের ছাড়পত্র দেয়া হোক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হোটেলের দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা জানান, স্বাস্থ্য বিভাগ তো নির্দেশনা দিয়ে খালাস। নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। কোয়ারেন্টাইন বাড়ানোর ঘোষণার পর ভারতফেরতরা মারমুখী হয়ে উঠছেন। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতরের আমলে নেয়া উচিত।
জানতে চাইলে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, ঈদের ছুটি ঘোষণার পর স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে নতুন নির্দেশনা আসে। নির্দেশনা মোতাবেক কোয়ারেন্টাইন শেষে সকলের করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে কোয়ারেন্টাইনের ১৫তম দিনে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পাঠানো হবে। রিপোর্ট আসার পর নেগেটিভ হলেই ছেড়ে দেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘পিসিআর টেস্ট রিপোর্ট যাতে দ্রুত পাওয়া যায়, সেজন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। সবাইকে এ নির্দেশনা মানতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।’
যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা পাওয়ার পর শনিবার তা কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তাদের ধৈর্য্য ধরতে অনুরোধ করছি। কারণ সরকারি নির্দেশনা মানতেই হবে।’
মিলন রহমান/এএএইচ/জিকেএস