সীমান্ত দিয়ে মানুষ আসছেই, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত বন্ধ থাকলেও অবৈধভাবে ভারত থেকে মানুষ আসা ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ ভারত থেকে অবৈধভাবে দেশে আসছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা, যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা। এসব জেলার ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে মানুষ যাতায়াত অব্যাহত রয়েছে।
বৈধ পথে যারা ফিরছেন, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যারা কোয়ারেন্টাইনে আছেন তাদের অনেকের শরীরে করোনার অস্তিত্ব মিলছে। এদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। কিন্তু যারা অবৈধ পথে ফিরছেন, তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব জেলার অনেক স্থানে সংক্রমণ শুরু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, অবৈধভাবে ভারত থেকে মানুষ আসা বন্ধ না হওয়া দেশের জন্য বিপজ্জনক। যে কোনো সময় দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের পূর্ণ সংক্রমণ শুরু হতে পারে। আর সেই ধাক্কা সামাল দেয়া কঠিন হবে। মহাদুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে অনতিবিলম্বে সীমান্তে সুরক্ষা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়ে তারা বলেন, ভারত থেকে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের অনেকের শরীরেই সংক্রমণ ধরা পড়ছে। অধিক সংক্রমণশীল ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের পাঁচ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাই সীমান্তে এখনই কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে।
সম্প্রতি সাতক্ষীরায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা ভারতফেরত ১৩৯ জন পাসপোর্টধারী যাত্রীর মধ্যে ১১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। দর্শনা দিয়ে এক সপ্তাহে দেশে ফিরেছেন ৫৪৭ জন, করোনা শনাক্ত হয়েছে ৯ জন। ইতোমধ্যে হাসপাতালের করোনা রেডজোনে থাকা নারী ও কিশোরসহ কয়েকজন মারাও গেছেন।
ভারতে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি ভারতের কর্ণাটকের বাসিন্দা (হোটেলের বাবুর্চি) বাদশা শেখ নামের এক ব্যক্তি অবৈধ পথে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন। তার শ্বশুরবাড়ি বেনাপোলের পোড়া নারানপুর গ্রামে। পুলিশ তাকে আটক করে বেনাপোলের একটি হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈধ স্থলবন্দর ছাড়াও দুই দেশের বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকা রয়েছে। এসব স্থানে কাঁটাতারের বেড়া নেই। এখনও অনেক এলাকা আছে, যেখানে একটি বাড়ির ভেতর দিয়ে সীমান্তরেখা গেছে। এসব পথ দিয়ে অবৈধভাবে দৈনিক বিপুলসংখ্যক মানুষ দেশে প্রবেশ করছেন।
সম্প্রতি যশোরের একটি স্থলবন্দর দিয়ে বৈধভাবে একদিনে চারজন দেশে প্রবেশ করেন। একই দিন ওই এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করেন ৩০ জন।
এদিকে বিদেশ থেকে যারা দেশে আসছেন, তাদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। কিন্তু বৈধভাবে যারা ভারত থেকে আসছেন, তাদের মধ্যে যারা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার আত্মীয়-স্বজন, তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা যাচ্ছে না।
শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার ইউসুফ আলী বলেন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ যাতায়াত আমরা ঠেকাতে পারিনি। ভারত থেকে অবৈধভাবে আসছে মানুষ।
তিনি বলেন, ভারতে করোনার ভয়াবহ অবস্থা। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস, হোয়াইটস ফ্যাঙ্গাস দেশে ছড়িয়ে পড়লে কী অবস্থা হবে তা কল্পনা করাও কঠিন।
জামাল হোসেন/এসআর/এএসএম