গাজীপুরে বাস ছাড়া চলছে সব যান, খোলা সরকারি অফিসও
গাজীপুরে মঙ্গলবার (২২ জুন) ভোর ৬টা থেকে সরকারঘোষিত লকডাউন শুরু হয়েছে। তবে চলছে ঢিলেঢালাভাবে। বাস ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। বিশেষ করে অটো রিকশা, সিএনজি, লেগুনা, পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন সরকারি অফিসও খোলা রয়েছে।
দুপুরে গাজীপুর সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দলিল লেখক ও নকল নবিশরা কাজ করছেন। সেখানে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। এমনকি অনেকের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। সাবরেজিস্ট্রার তার দফতরে উপস্থিত থাকলেও কোনো প্রকার দলিল রেজিস্ট্রি হচ্ছে না।
সকাল থেকে বৃষ্টি থাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বেড়ে যায়। শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরের শিল্প কারখানাগুলো খোলা থাকায় সকালে সড়কে শ্রমিকদের চলাচল দেখা গেছে। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের পায়ে হেটে কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব পরিবহনের মাধ্যমে শ্রমিকদের আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
এদিকে লকডাউনকে কেন্দ্র করে বিশেষ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন অফিস। পৃথক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা ও মহানগর পুলিশ। এরইমধ্যে মঙ্গলবার ভোর থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় জেলার সব প্রবেশদ্বার।
গাজীপুরের সবগুলো রেল জংশনে বন্ধ রয়েছে যাত্রী ওঠানামা। সকাল থেকে পুলিশ রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর-টঙ্গী ব্রিজ, কামারপাড়া, নরসিংদি সীমান্তে ঘোড়াশাল ব্রিজ, ময়মনসিংহ সীমন্তে জৈনা বাজার, কালিয়াকৈরসহ শহরের কয়েকটি পয়েন্টে কঠোরভাবে অবস্থান নিয়েছে। এসব চোকপোস্টে সব যানবাহন ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। জরুরি সেবা, পণ্যবাহী যান, রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশ জেলার মহাসড়কগুলোর বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীবাহী যানবাহন আটকে দেয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন গাজীপুর জেলার বাইরে থেকে আসা যাত্রীরা। অনেক যাত্রী পুলিশকে অনুরোধ করে প্রবেশের চেষ্টা করেও ঢুকতে পারেননি। বাধার মুখে কেউ কেউ বিকল্প রাস্তা দিয়ে জেলায় প্রবেশ করেন। পরিবহনের চালকসহ যাত্রীদের অনেকেই লকডাউনের তথ্য জানেন না বলে দাবি করেছেন।
টঙ্গী রেল জংশনের স্টেশন মাস্টার মো. হালিমুজ্জামান জানান, লকডাউনের কারণে মঙ্গলবার সকাল থেকে গাজীপুরের জয়দেবপুর ও টঙ্গী রেল ষ্টেশনে কোন ট্রেন থামেনি। এছাড়াও বন্ধ রয়েছে গাজীপুর থেকে কমলাপুর রুটে চলাচল করা তুরাগ ডেমো ও কালিয়াকৈর কমিউটার ট্রেন। অনেক যাত্রী স্টেশনে এসে ট্রেন না পেয়ে ফিরে গেছে।
সকাল ৭টায় গাজীপুর ও ঢাকার প্রবেশপথ আব্দুল্লাহপুর-টঙ্গী ব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে পুলিশের কড়াকড়ি অবস্থান।
লকডাউন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইলতুৎ মিশ বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে গাজীপুরে ৯দিনের লকডাউন শুরু হয়েছে। সে লক্ষ্যে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ শহরের প্রবেশদ্বারগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে যান চলাচল ও সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। ঢাকা থেকে আসা এবং ঢাকায় ঢুকার সময় পুলিশের চেকপোস্টে পড়তেই হবে। সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। আমরা চাই একটা কমপ্লিট লকডাউন।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. খায়রুজ্জামান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত গাজীপুরে করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়নি। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আম নিয়ে আসা আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের গাজীপুরের প্রবেশপথগুলোতে করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। জেলার কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনার চিকিৎসায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে করোনা ইউনিটে ১৭ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’
মো. আমিনুল ইসলাম/এসজে/এএসএম