কয়রায় ঘরে ঘরে জ্বর, ঊর্ধ্বমুখী করোনা শনাক্তের হার
![কয়রায় ঘরে ঘরে জ্বর, ঊর্ধ্বমুখী করোনা শনাক্তের হার](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2019November/file-20210627192056.jpg)
খুলনার কয়রা উপজেলায় বাড়ছে জ্বরের প্রাদুর্ভাব। এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি।
এদিকে আশঙ্কাজনক হারে জ্বরের রোগী বেড়ে যাওয়ায় এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভীতি। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনা রোগীর সংখ্যাও। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলায় করোনা শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশে। এছাড়া করোনা আক্রান্তের ভয়ে অনেকেই ডাক্তারের কাছে না গিয়ে বাড়িতেই গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
উপজেলার বিভিন্ন ওষুধের দোকানদাররা জানান, গত কয়েকদিন সর্দি, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও গলাব্যথার ওষুধ বিক্রি হয়েছে স্বাভাবিকের চাইতে কয়েকগুণ বেশি। তবে সরবরাহ কম থাকায় রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ উপজেলার ২০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। উপজেলায় এখন পর্যন্ত করোনা পজিটিভ হয়েছেন ১৪৮ জন। আর করোনায় মোট মারা গেছেন সাতজন।
এছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে গত সাতদিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩০ জন। জ্বরসহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ২০-৩০ জনের মতো রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে পুরো উপজেলায় হঠাৎ করে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। চলছে কঠোর লকডাউন।
এরইমধ্যে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণও করেছেন বেশ কয়েকজন। তবে নমুনা দিতে মানুষের অনীহা থাকায় উপজেলায় করোনা রোগীর প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করতে পারছে না উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
কয়রা সদর ইউনিয়নের আব্দুল করিম (৪৫) ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের করিম মিয়া (৩০) বলেন, ‘আমরা ৪-৫ দিন থেকে জ্বর ও সর্দিতে ভুগছি। এ কয়েকদিনেই জ্বরে কাহিল হয়ে পড়েছি। তবে চিকিৎসা নিচ্ছি বাড়িতে থেকেই।’
কয়রা সদর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এস এম বাহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এলাকায় অনেক মানুষের জ্বর ও সর্দি হওয়ার খবর পাচ্ছি। তাদেরকে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়ার জন্য বলেছি।’
মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন লাভলু বলেন, ‘ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ জ্বরে ভুগছেন। আমার ইউনিয়নে দীর্ঘদিন জ্বরে ভুগে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। এখানে প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি রয়েছেন।’
উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুদীপ বালা জানান, উপজেলায় হঠাৎ করে করোনা প্রকোপ বেড়ে গেছে। কারণ এলাকার জনসাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। এছাড়া ভারত থেকে বিভিন্ন পথে উপজেলায় লোক আসায় ও তাদের অবাধ চলাচলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তদারকিতে আক্রান্তরা নিজ নিজ হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। করোনা থেকে রক্ষা পেতে হলে সচেতন হওয়া খুবই জরুরি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ‘করোনা নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসন ২২ জুন-২৮ জুন পর্যন্ত লকডাউন নিশ্চিতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে করোনা আক্রান্তদের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। তাদের শুকনা খাবার ও ফল সরবরাহ দেয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়ায় উপজেলা প্রশাসন থেকে সতর্কতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’
আলমগীর হান্নান/এসএমএম/এমএস