ঈদের আগে লকডাউন দেয়ায় দুঃশ্চিন্তায় ঢাকা ছাড়ছেন তারা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ
প্রকাশিত: ০২:২১ পিএম, ২৯ জুন ২০২১

রাজধানীর একটি প্রিন্টিং প্রেসে চাকরি করেন আমের আলী (৪০)। ফরিদপুরে গ্রামের বাড়িতে থাকেন তার স্ত্রী, দুই সন্তানসহ বৃদ্ধ মা-বাবা। গ্রামে অল্প জমির ফসল এবং তার বেতনের টাকা সংসারের আয়ের প্রধান উৎস।

ঢাকায় বাসা ভাড়া আর খাওয়া খরচ বাদে সব টাকাই বাড়িতে পাঠান তিনি। কিন্তু করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আগামী ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক লকডাউনের কারণে তার প্রিন্টিং প্রেস বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে ঢাকায় বেকার বসে থাকার চেয়ে দু’দিন আগেই গ্রামে যাচ্ছেন আমের আলী।

তার মতোই গ্রামে বাড়ি রাজবাড়ীতে ফিরছেন জসিম উদ্দিন নামে আরেক ব্যক্তি। তিনি সাভারের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।

jagonews24

জসিম উদ্দিন জানালেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় প্রথমে সিএনজি, এরপর রিকশা এবং মোটরসাইকেলে করে ভেঙে ভেঙে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছান তিনি। পথে ভাড়াও গুনতে হয়েছে অনেক বেশি। কিন্তু তারপরও বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাকে।

জসিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন তো তবু ভেঙে ভেঙে যেতে পারছি। যদি ১ জুলাই থেকে সরকার এমন অবস্থা করে, যাতে ঘর থেকে বের হতে না পারি! তাহলে তো মরতে হবে। অফিস বন্ধ থাকবে। এসময় বাসা ভাড়া দেব কীভাবে? আর খাবই বা কি?’

আমের আলী ও জসিম উদ্দিনের মতো মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটে আসা বেশির ভাগ যাত্রী বাড়ি ফেরার কারণ হিসেবে এমন কথা জানাচ্ছিলেন।

তাদের দাবি—বাধ্য হয়েই তারা ঢাকা ছাড়ছেন। ঈদকে সামনে রেখে সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণায় তারা আরো দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন। আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়ায় সর্বাত্মক লকডাউনের সময় আরও বাড়তে পারে বলেও শঙ্কা তাদের। তাই গণপরিবহন না থাকলেও পথে পথে নানা ভোগান্তি মাথায় নিয়েই গ্রামে ফিরছেন মানুষ।

jagonews24

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ যাতায়াত করে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুট দিয়ে। মঙ্গলবার (২৯ জুন) সকাল থেকেই গ্রামে ফেরা মানুষের চাপ রয়েছে এই ঘাটে। পারাপার হচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়িও।

সরেজমিন দেখা গেছে, বিভিন্ন যানবাহনে করে মানুষ ফেরিঘাটে পৌঁছাচ্ছে। অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়েই রওনা হয়েছেন। ঘাটে একটি ফেরি ভিড়তেই তারা পণ্যবাহী ট্রাকসহ জরুরি যানবাহনের সঙ্গে উঠে যাচ্ছেন। তবে করোনার সংক্রমণ বাড়লেও এখনো অনেকের মাঝেই নেই সচেতনতা। অনেকের মুখেই মাস্ক পর্যন্ত দেখা যায়নি।

এদিকে, ঘাটে পৌঁছাতে পথে পথে দুর্ভোগ-ভোগান্তি থাকলেও ফেরিঘাটে কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না ঘরমুখো মানুষের। ঘাটে এসেই তারা ফেরি পার হতে পারছেন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা অঞ্চলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৪টি ফেরি চলাচল করছে। দূরপাল্লার বাস না থাকায় ফেরিতে শুধুমাত্র পণ্যবাহী ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যানগুলো পারাপার করা হচ্ছে। সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণার পর যাত্রীর চাপও কিছুটা বেড়েছে।’

বি এম খোরশেদ/এএএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।