স্বামীর নির্যাতন, হাজিরা দিতে এখন আর কেউ সঙ্গে যায় না শান্তির
স্বামীর নির্যাতনের সুবিচারের আশায় দিন কাটছে শান্তি বিশ্বাস নামের এক নারীর। স্বামীর বিরুদ্ধে করা নির্যাতন মামলার চার বছরেও বিচার সম্পন্ন হয়নি। এখন তার চোখে কেবলই হতাশা। তবুও হাল ছাড়তে চান না তিনি।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বরইহাটি গ্রামের দ্বিজবর বিশ্বাসের মেয়ে শান্তি বিশ্বাস। ২০১১ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার শিবপুর গ্রামের কার্তিক কির্তুনীয়ার ছেলে সুরজিৎ কির্তুনীয়ার সঙ্গে। বেশ ভালোই কাটছিল তাদের সংসার। হঠাৎ ভাসুর দিলীপ কির্তুনীয়া ও তার স্ত্রীর প্ররোচনায় শান্তির বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে চাপ বাড়তে থাকে। শুরু হয় সংসারে অশান্তি।
এক পর্যায়ে শান্তি বাবার বাড়ি থেকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা এনে দেন স্বামীকে। কিছুদিন ভালো থাকার পর আবারও টাকা আনার চাপ দিলে শান্তি তার পরিবারের অপারগতার কথা জানান। এরপরও তারওপর শারীরিক নির্যাতন বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে শান্তিকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
২০১৭ সালে শান্তি গোপালগঞ্জ আদালতে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে তার স্বামী ও ভাসুরসহ চারজনকে আসামি করে মামলা করেন। এ মামলায় শান্তির স্বামী আটক হলেও পরে জামিনে মুক্তি পান।
এদিকে আদালতপাড়ায় চার বছর ধরে হাজিরা দিতে দিতে আজ সর্বস্বান্ত শান্তি। ছোটবোনের স্বামীর বাড়িতে আশ্রয়ে থাকা শান্তির হয়ে আদালতে দৌড়াদৌড়ি করার কেউ নেই। এমনকি মাঝে মাঝে মামলার তারিখও জানতে পারেন না। তবুও সুবিচারের আশায় আদালতের দিকে তাকিয়ে আছেন শান্তি।
শান্তি বিশ্বাসের বড় ভাইয়ের স্ত্রী রত্না বিশ্বাস বলেন, ‘শান্তির সঙ্গে যাওয়ার কোনো লোক না থাকায় মামলাটি দেখাশোনা করার কেউ নেই। শান্তি লেখাপড়া জানে না সে মামলা মোকাদ্দমা বোঝে না। তাকে কে বা কারা ফোন করে আদালতে মামলার তারিখের কথা জানায়। কিন্তু আদালতে গিয়ে দেখে বন্ধ।’
মামলার বাদী শান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘চার বছর ধরে আদালতে ঘুরতে ঘুরতে আমি অর্থনৈতিকভাবে সর্বস্বান্ত হয়েছি। প্রথমে আমার ভাইবোনরা আমার সঙ্গে যেত। এখন আর কেউ যেতে চায় না। আদালতে তারিখের দিন অনেক খরচ হয় তাও আমি দিতে পারি না। আদালত আমাকে সুবিচার দেবেন এই আমার প্রার্থনা।’
গোপালগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট রঞ্জিত বাইন গামা বলেন, ‘মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। করোনার কারণে মামলাটির দীর্ঘসূত্রতা হয়েছে। লকডাউন শেষ হলে নিয়মিত আদালত বসলে আশা করি শান্তি সুবিচার পাবেন।’
শান্তিকে আইনি সহায়তা দিতে তার পাশে দাঁড়িয়েছে ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও আম্বেলা ফাউন্ডেশন’। ফাউন্ডেশনের টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ার প্রকল্প সমন্বয়কারী আতিকুজ্জামান বলেন, ‘শান্তিকে আমরা আইনি সহায়তা দিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছি। আমরা চাই একটি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যা সমাজের কাছে একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
মেহেদী হাসান/এসজে/এমএস