করোনায় মৃত ব্যক্তিদের সৎকার-দাফনে পিছপা হননি এসিল্যান্ড শাহ আলম
মানবকল্যাণে কাজ করে চির অম্লান ও বরণীয় হয়ে রয়েছেন নরসিংদী সদরের সদ্য বিদায়ী এসিল্যান্ড শাহ আলম মিয়া। করোনা থেকে মানুষকে রক্ষায় যেমনি কাজ করে গেছেন, তেমনি সরকারের রাজস্ব খাতকে মজবুত ও টেকসই করার জন্যও কাজ করেছেন। সর্বশেষ কুইক রেসপন্স টিমের আহ্বায়ক হিসেবে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফন ও সৎকার করে জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনার শীর্ষে চলে আসেন তিনি।
করোনায় মৃত ব্যক্তিদের মরদেহ দাফন করতে স্বজনরা যখন ভয় পেতেন, তখন এসিল্যান্ড শাহ আলম ছিলেন অগ্রভাগের সেনাপতি। সেই সময় কখনো তাকে দেখা গেছে চিতায়, কখনো গোরস্থানে। সম্প্রতি তার পদোন্নতির কারণে বদলি হওয়ায় নরসিংদীবাসীর মনে নাড়া দিয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মো. শাহ আলম মিয়া ২০১৬ সালে সর্বপ্রথম নরসিংদী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নেজারত ডেপুটি কালেক্টরেট (এনডিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৯ সালে পদোন্নতি পেয়ে নরসিংদী সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগদান করেন। তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসিল্যান্ড হিসেবে সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ভিন্নধর্মী কাজের জন্য পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ এসিল্যান্ডের সম্মাননা দেয়া হয় তাকে। ২০১৯ সালে সততা, নিষ্ঠা ও কর্মদক্ষতায় অবদানের জন্য জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার ও স্বচ্ছ সেবা প্রদানে বিশেষ ভূমিকা রাখায় ২০১৮ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তার পুরস্কারও পান তিনি।
এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মাধবদীতে ব্রহ্মপুত্র নদের দুপাড়ে সাত কিলোমিটার অংশে প্রায় সাড়ে ৫০০ অবৈধ স্থাপনাসহ কয়েকশ বিঘা জমি উদ্ধার করেছেন। যার বাজারদর ৩৫০ কোটি টাকা। সরকারি জমি উদ্ধার করে সরকারের রাজস্ব খাতকে শক্তিশালী করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ভেজালবিরোধী অভিযান,পরিবেশ রক্ষার অভিযান, অবৈধ বালু উত্তোলন, বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং প্রতিরোধে তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়। নতুন কর্মস্থল ফরিদপুরের জেলা প্রশাসনে যোগ দিতে এরই মধ্যে নরসিংদী থেকে বিদায় নিয়েছেন।
জানতে চাইলে নরসিংদীর ইনডিপেনডেন্ট কলেজের অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান মৃধা সদর এসিল্যান্ড শাহ আলম মিয়ার সম্পর্কে বলেন, ‘আমার দেখা মতে তিনি শুধু একজন সরকারি কর্মকর্তাই ছিলেন না, নরসিংদীর সমাজব্যবস্থাকে মনেপ্রাণে ধারণ করেছিলেন। কাজের ক্ষেত্রে ছিলেন কর্মবীর, মানুষের কল্যাণে ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। অসহায় মানুষদের জন্য লড়াই করে গেছেন, বিশেষ করে করোনাকালে নিজের কথা চিন্তা না করে নিজের পরিবারের কথা না ভেবে অনবরত দিনরাত একাগ্রচিত্তে কাজ করে গেছেন, যা নরসিংদীবাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
নরসিংদী পৌরসভার মেয়র মো. আমজাদ হোসেন বাচ্চু বলেন, ‘নিঃসন্দেহে তিনি একজন ভালো মনের মানুষ ছিলেন। কর্ম দক্ষতায় ছিলেন অনড়, বিশেষ করে করোনাকালে তার যে অবদান তা আমরা কোনো দিন ভুলব না। আমি আশাবাদী তার কর্মদক্ষতায় তিনি অনেক দূর এগিয়ে যাবেন।’
সঞ্জিত সাহা/এসজে/এমএস