শৈশবের স্মৃতিঘেরা গুলগুলি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জামালপুর
প্রকাশিত: ১২:১৬ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০২১

‘গুলগুলি’ নামটি শুনলে হয়তো এ যুগের অনেকেই ভ্রু কুঁচকাতে পারেন। কিন্তু যারা চেনেন গুলগুলির কথা শুনলেই জিভে জল এসে যাবে। একসময় এটিই ছিল জামালপুরের এতিহ্যবাহী মুখরোচক খাবার (সদাই)।

মুখরোচক গুলগুলির ঠিক কবে থেকে প্রচলন শুরু হয় তা সঠিক বলা যাবে না, তবে অনেকের ধারণা ৬০-৭০ বছর আগে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলাসহ সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে প্রথম এ খাবারের প্রচলন শুরু হয়। গোল গোল করে তেলে ভাজা হয় বলে এটিকে গুলগুলি বলা হয়ে থাকে।

কথিত রয়েছে, একসময় এ অঞ্চলে প্রচুর পেঁয়াজের আবাদ হতো, পেঁয়াজ বিক্রির জন্য দূরদূরান্ত থেকে হাট-বাজারে কৃষকের আগমন ঘটতো। সকালবেলা গরম গরম এ গুলগুলি দিয়েই তারা নাস্তা সেরে নিতেন। কালের বিবর্তনে এটির খুব বেশি প্রচলন না থাকলেও নিভৃত গ্রাম বা চরাঞ্চলের কোনো কোনো হাটে এখনও এটি বিক্রি করতে দেখা যায়।

জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের যমুনা বাজারে গিয়ে দেখা মিললো খাইরুল ইসলাম নামে এমনই একজন গুলগুলি কারিগরের। দেখা যায়, বাজারের এক কোণায় অস্থায়ী একটি দোকান বসিয়ে কড়াইয়ে গোল গোল করে ময়দার গোলা ছেড়ে দিচ্ছেন, আর কিছুক্ষণ পর তৈরি হচ্ছে মুখরোচক গুলগুলি। তাকে ঘিরে আছে ছোট-বড়, বৃদ্ধসহ অনেক লোকজন। তারা সিরিয়াল ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন গুলগুলি নেয়ার জন্য।

কথা হয় গুলগুলি কিনতে আসা জাহিদ, আকাশ, শাফিনসহ আরো অনেকের সঙ্গে। তারা জানান, প্রতি হাটেই তারা এই গুলগুলি খেতে আসেন। তেলে ভাজা এ গুলিগুলি মচমচে হয় বলে খাইরুল ভাইয়ের গুলগুলি অনেক বিখ্যাত, সহজে সিরিয়াল পাওয়াই যায় না, দাঁড়িয়ে থেকে তারপর এই গুলগুলি কিনতে হয়।

কথা হয় ষাটোর্ধ্ব ইউনুস মণ্ডলের সঙ্গে। তিনি জানান, জন্মের পর থেকে এই মুখরোচক খাবারটি খেয়ে আসছি, খাবারটি খেতে খুবই সুস্বাদু। এখনও গ্রামগঞ্জের হাটে বাজারে এ খাবারের বেশ চাহিদা। শুনেছি আমাদের জন্মের আগে থেকেই এই খাবারের প্রচলন।

শৈশবের স্মৃতিঘেরা গুলগুলি

গুলগুলির কারিগর খাইরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে বিভিন্ন হাটে-বাজারে এ ব্যবসা করে আসছি। আগে সিঙ্গাড়া বিক্রি করতাম, কিন্তু গুলগুলির চাহিদা বেশি থাকায় এ ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ি।

তিনি জানালেন, মূলত এটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ময়দা, সয়াবিন তৈল, খাবার সোডা এবং আখের গুড়। প্রথমে ময়দা ও পানি একসাথে মিশিয়ে একটি পাত্রের মধ্যে প্রায় একঘণ্টা রাখা হয়। পরবর্তীতে মাখানো ময়দা যখন জমে আসে তখন ময়দা হাতের সাহায্যে ছোট আকারের গোল গোল করে কড়াইয়ের ফুটন্ত তেলের মধ্যে ছেড়ে ভাজতে হয়।

কালের সাক্ষী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান (ইউপি) সামস উদ্দিন। গুলগুলির কথা বলতেই শৈশবের স্মৃতিতে ফিরে আবেগাপ্লুত হয়ে যান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গুলগুলি আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য। আমার জন্মেরও আগ থেকে অর্থাৎ প্রায় ১০০ বছর ধরে এই খাবারের প্রচলন বলে জানি। আগে আমরা বাপ-দাদার সঙ্গে হাটে গিয়ে পাট বিক্রি করে গুলগুলি, আটা দিয়ে বানানো নই, জিলাপি খেতাম। কিন্তু কালের বিবর্তনে এ খাবারগুলো এখন বিলুপ্তির পথে।

তবে এখনো এ গুলগুলির চাহিদা থাকায় গ্রামাঞ্চলের অনেক সাপ্তাহিক হাটগুলোতে কিনতে পাওয়া যায় এবং জীবিকার জন্য অনেক কারিগরও পেশা টিকিয়ে রেখেছেন বলে তিনি জানান।

নাসিম উদ্দিন/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।