গাড়ি চালিয়ে এখন আর পোষায় না ঘোড়সওয়ারিদের
‘এখন আর কেউ এ গাড়িতে চড়তে চায় না। মালামালও টানতে চায় না। নেশার কারণে এ পেশায় পড়ে আছি। কোনোরকমে দিন পার করছি’। এভাবেই নিজের জীবনচলা নিয়ে কথা বলছিলেন আশুলিয়ার ঘোড়সওয়ারি পঞ্চাশোর্ধ্ব তারা মিয়া।
ঘোড়ার গাড়িতে বসেই কথা হয় তারা মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, আগে এসব গাড়ির বেশ চাহিদা ছিল। এখন বিপদে না পড়লে কেউ নিতে চায় না। এরমধ্যে ঘোড়ার খাদ্যের দামও বেড়ে গেছে। এখন বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও ছোট ছোট পিকআপের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় জৌলুশ হারিয়েছে ঘোড়ার গাড়ি। তবে এতে কোনো আক্ষেপ নেই তারা মিয়ার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘোড়ার গাড়ি চালিয়েই ছয়জনের সংসার চালিয়েছি। দুই ছেলেকে অনার্সে পড়াশোনা করাচ্ছি। বিয়েও দিয়েছি দুই মেয়েকে।’
উপজেলায় এসব গাড়ির সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও ঘোড়সওয়ারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাভারে বিভিন্ন এলাকায় ১৫ থেকে ১৮টি ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে। যার বেশিরভারই মালামাল আনা-নেওয়ার কাছে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ঘোড়সওয়ারি লোকমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোনো কাজ শিখিনি। শুধু শিখেছি মাল টানতে। তাই মালই টেনে যাচ্ছি। ঘোড়া পালতে এখন প্রচুর খরচ করতে হয়। তাতে পোষায় না। তবু বেঁচে থাকার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘোড়ার গাড়ি আর মহিষের গাড়ির এসময় কদর ছিল। দূরের হাটগুলোতে মালামাল আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহার হতো দাপটের সঙ্গে। এখনো কানে ভাসে গাড়ির চাকার আর ঘোড়ার খুরের শব্দ।’
তিনি বলেন, বিয়ে বাড়ির ঐতিহ্যের অংশও ছিল এ গাড়ি। পালকির পরই সাভারে অনেক বছর ধরে বিয়েতে দাপট দেখিয়েছে ঘোড়ার গাড়ি। এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। আমরা সবাই যন্ত্রনির্ভর হয়ে যাচ্ছি।
মাহফুজুর রহমান নিপু/এসআর/এএসএম