বিলীনের পথে ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাড়িটি

জাহিদ পাটোয়ারী
জাহিদ পাটোয়ারী জাহিদ পাটোয়ারী , কুমিল্লা কুমিল্লা
প্রকাশিত: ১১:৪৫ এএম, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। এটি দেখে বোঝার উপায় নেই এখানেই বসবাস করতেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। বর্তমানে বাড়িটি ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। এতে করে ভাষা সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম।

২০১০ সালে তৎকালীন তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বাড়িটি পরিদর্শন করতে এসে এখানে ‘ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি জাদুঘর’ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও গত প্রায় ১১ বছরেও এর বাস্তবায়ন হয়নি। আগামী প্রজন্মের কাছে ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস পৌঁছে দিতে সরকারিভাবে বাড়িটি সংস্কার করে ভাষা যাদুঘর কারার উদ্যোগ গ্রহণের প্রত্যাশা স্থানীয়দের।

জানা যায়, ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের রাজধানী করাচিতে গণপরিষদের অধিবেশন শুরু হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি ওই অধিবেশনে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তই সর্বপ্রথম রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবিতে সোচ্চার হন। তিনি অধিবেশনে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, গণপরিষদে যে কার্যবিবরণী লেখা হয় তা ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় লিপিবদ্ধ হয়। সমগ্র পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন।

bare1

অধিবেশনে ইংরেজি ও উর্দুর সঙ্গে বাংলা ভাষা ব্যবহারের দাবি তোলেন তিনি। তখনকার পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এতে ক্ষিপ্ত হন। এতে ধীরেন্দ্রনাথ তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের রোষাণলে পড়ে কয়েকবার কারাবরণ করেন।

ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্য আগে থেকেই টার্গেট হয়ে ছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ। আর সে কারণেই ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কুমিল্লা নগরীর ধর্মসাগরের পশ্চিম পাড়ের এই বাড়ি থেকে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও তার ছেলে দিলীপ কুমার দত্তকে ধরে নিয়ে যায় কুমিল্লা সেনানিবাসে। সেখানে ৮৫ বছর বয়স্ক এই দেশপ্রেমিক রাজনীতিককে অমানবিক নির্যাতন চালায়। পরে বাবা-ছেলে দুজনকেই হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে তাদের মরদেহের সন্ধানও পায়নি পরিবার।

এরপর থেকে এ বাড়ির অবকাঠামো ক্রমেই ভেঙে পড়তে থাকে। এই বাড়ি দেখে এখন আর বোঝার উপায় নেই, এখানে একসময় অবিভক্ত পাকিস্তানের এক প্রথিতযশা বর্ষীয়ান রাজনীতিক বসবাস করতেন।

bare1

ইতিহাসবিদ, গবেষক ও সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আহসানুল কবীর জাগো নিউজকে বলেন, ধীরেন্দ্রনাথের বাড়িটি শুধু কুমিল্লাবাসী না, এটি সারাদেশের মানুষের অহঙ্কারের জায়গা। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় আজ বাড়িটি জীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। বাড়িটিকে কেন্দ্র করে আরও আগেই অনেক কিছু হতে পারতো। কেন হয়নি এটি না ভেবে, এখনই রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

কুমিল্লাবাসীর পক্ষে সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বাড়িটি সংস্করণে যদি আইনগত কোনো বাধা না থাকে প্রয়োজনে অধিগ্রহণ করে এখানে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে একটি জাদুঘর করা হোক। যেটি দেখে শত শত বছর বাংলা ভাষা-ভাষির মানুষ অনুপ্রাণিত হবে। যা নিয়ে কুমিল্লার মানুষ অহঙ্কার করতে পারে।

bare1

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নাজমুল বারী চৌধুরী বলেন, বাংলা ভাষার প্রস্তাবক ও ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের স্মৃতি রক্ষার দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আমরা আন্দোলন সংগ্রামসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। জেলা প্রাশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছি। আমাদের দাবি বাড়িটি সংস্কার করে আগামী প্রজন্মের জন্য ইতিহাস রক্ষায় ধীরেন্দ্রনাথের নামে একটি ভাষা জাদুঘর স্থাপন করা হোক।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সবকিছু করাও সম্ভব না। ইতোপূর্বে আমরা ২২ লাখ টাকা খরচ করে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে স্টেডিয়ামের মূল গেটটি নির্মাণ করে দিয়েছি। ধীরেন্দ্রনাথ পরিবারের লোকজন বাড়িটি সংস্কারের দাবি তুললে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় দ্রুত সেটা করে দেবে। যেমনভাবে কুমিল্লায় শচীন দেববর্মণের বাড়িটি সংস্কার করা হয়েছে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।