খাস জমি কিনে প্রতারিত ১৫০ পরিবার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও
প্রকাশিত: ০২:৩৪ পিএম, ০২ মার্চ ২০২২

ঠাকুরগাঁওয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে প্রায় ১৮১ একর সরকারি জমি। সেই জমি ব্যক্তি মালিকানার ভেবে ক্রয় করে প্রতারিত হয়েছেন প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ জন। ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভুল্লির সবদলহাট এলাকায়।

জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ অনুযায়ী একটি পরিবারের খাস দখলে রাখা জমির সর্বোচ্চ পরিমাণ ২০ একর (৬০ বিঘা) করে নির্ধারণ করা হয়। এই অধ্যাদেশ ১৯৮৪ সালের ১৪ই এপ্রিল অর্থাৎ ১লা বৈশাখ থেকে কার্যকর হয়। সেই অনুযায়ী ২০০১ সালে সবদল হাট এলাকায় রেজানুল হক ইদু চৌধুরী, আফতাব উদ্দিন চৌধুরী ও মোফাজুল হক চৌধুরীর দখলে থাকা ১৮৫.৫ একর জমি সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর অভিযোগ, সরকারের এই খাস খতিয়ানভুক্ত জমি কিছু জাল দলিলের সাহায্যে বিক্রি শুরু করেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুর আলম সিদ্দিক মুক্তি, মেম্বার আলমগীর হোসেন, জমি ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ, হাসেম, কামাল, রবিউল ইসলাম ও হাসেম আলী। সেইসঙ্গে এই জমি বিক্রয় কার্যক্রমের সকল রকম কার্য সম্পাদন করেন মালেক মুহুরি ও তহশিলদার মশিউর রহমান।

ক্ষতিগ্রস্ত কাশেম জানান, ক্রেতারা জানতেন জমি জালিয়াতি চক্রটি মূল মালিকের মাধম্যে ক্রয়সূত্রে এই সকল জমির লিগ্যাল মালিক। তবে এখন সকলেই জানতে পেরেছেন, আসলে তারা ভুয়া দলিলে সরকারি খাস জমি কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশের নামে রেজওয়ানুল হক ইদু চৌধুরীর লিখে দেওয়া ১ একর জমি কিছুদিন আগেই উদ্ধার হয়। সেই সময়েই ১৮৫.৫ একরের মধ্যে বেদখলে থাকা আশেপাশের প্রায় ১৮১.৫ একর খাস জমির সন্ধান মেলে। সেখানে গুচ্ছ গ্রামের মাধম্যে সরকারের দখলে আছে মাত্র ৪.৫ একর জমি। ইতোমধ্যে এই সকল বেদখলের জমি উদ্ধারের বিষয়ে কাজও করছে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন। ফলে জালিয়াতির শিকার হওয়া অনেক পরিবারের নিঃস্ব হওয়ার অবস্থা।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কৃষক রাজ্জাক বলেন, আমি কৃষিকাজ করে ৬ সদস্যের সংসার চালাই। সারাজীবনের উপার্জনের সঞ্চয় থেকেই ২ বিঘা জমি কিনেছিলাম তৎকালিক ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে। কিন্তু এখন জানতে পারলাম আমি ঠকেছি। এই জমিটুকু চলে গেলে আমি ভূমিহীন হয়ে যাবো। আমার পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে কথা হয় অভিযুক্ত সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি জমির মূল মালিক আফতাফ উদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে জমি কিনেছিলাম। পরে এলাকার মানুষের কাছে বিক্রি করেছি। যদি কেউ জালিয়াতি করে তাহলে সেটা মূল মালিক করেছেন। আমি কিছুই জানি না।

সাবেক এ চেয়ারম্যানের সুরেই নিজেদের দোষ জমির সাবেক মালিকদের ওপরে চাপিয়েছেন অন্যান্য অভিযুক্তরাও। তবে সাবেক মালিকের মধ্যে কেউ বেঁচে না থাকায় কথা হয় তাদের উত্তরসূরিদের সঙ্গে। তারাও সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জমি কেনা-বেচায় জড়িত একজন বলেন, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল আমাকে জমির ক্রেতা খুঁজতে বলে। তাই আমি বিভিন্ন জনের কাছে জমি বিক্রি করে দিয়েছি। এটি যে খাস জমি সেটা আমি জানতাম না।

তবে মালেক মুহুরি ও তহশিলদার মশিউর সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন, সরকারি খাস জমি বিক্রি করার এখতিয়ার কারো নেই। যারা এই জমি বিক্রি ও দালালির সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। বিষয়টি এসিল্যান্ড সদরকে অবগত করা হয়েছে। তিনি তদন্ত অনুযায়ী সরকারি জমি উদ্ধারের কাজ করবেন।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে খাস জমির বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। সেখানকার অবৈধ কেনাবেচার অভিযোগের বিষয়ে জানি। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।

তানভীর হাসান তানু/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।