শামুকখোল পাখির কলকাকলিতে মুখর মাছিমপুর

নাসিম উদ্দিন নাসিম উদ্দিন , জেলা প্রতিনিধি, জামালপুর
প্রকাশিত: ০৬:০৮ পিএম, ১১ মার্চ ২০২২

অডিও শুনুন

কয়েক হাজার শামুকখোল পাখির কলকাকলিতে মুখোর জামালপুরের মাছিমপুর গ্রাম। গত ২০ বছর ধরে পৌরসভার ওই গ্রামের নূরুল হক মাস্টারের বাড়ির শিমুল ও কড়ই গাছে নিশ্চিন্তে বসবাস করে আসছে পাখিগুলো। অনুকূল পরিবেশ পেয়ে প্রতি বছর বারবারই ফিরে আসে এসব পাখির দল, থাকে একটানা ছয় থেকে আট মাস।

দূর থেকে দেখতে সাদা বকের মতো মনে হলেও মূলত এদের নাম শামুকখোল। লম্বা ঠোঁট দিয়ে শামুক খুঁজে খুঁজে খায় বলে এদের নাম এমটি হয়েছে। তবে পাখিটির ইংরেজি নাম এশিয়ান ওপেনবিল। প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে- এসব পাখি অনুকূল পরিবেশে ঝাঁকে ঝাঁকে বাস করতে পছন্দ করে।

jagonews24

স্থানীয়রা জানায়, পাখির কলকাকলিতেই ঘুম ভাঙে এই গ্রামের মানুষের। খুব সকালে দলবেঁধে বেরিয়ে যায় পাখিগুলো; সারাদিন ঘুরে ফিরে সন্ধ্যার আগে ফিরে আশ্রয় নেয় নূরুল মাস্টারের বাড়ির শিমুল ও কড়ই গাছের ডালে। এদিকে, পাখিগুলো দেখতে নুরুল মাস্টারের বাড়িতে ভিড় জমায় উৎসুক জনতা। সেখানে নেই কোনো পাখি শিকারি, নেই স্থানীয়দের শ্যেন দৃষ্টি।

স্থানীয় কৃষক আনোয়ার হোসেন, আলী আশরাফ, সেলিমসহ আরও অনেকে জানালেন, এই পাখিগুলো ধানক্ষেতে থাকা শামুক আর পোকা খেয়ে থাকে। ফলে একদিকে যেমন ধানক্ষেত পোকা-মাকড় থেকে রক্ষা পায়, অন্যদিকে পাখির বর্জ্যে সারও হয়।

jagonews24

একই গ্রামের বাসিন্দা গোলাম রব্বানী বলেন, শীতকালে এলাকার আলো-বাতাসের সঙ্গে পাখিগুলোর রয়েছে এক ধরনের আত্মিক সম্পর্ক। পাখিগুলো এ গ্রামে আসার পর অনেকেই শিকার করতে আসতো। আমরা গ্রামবাসীরা মিলে এই শিকারিদের বাধা দিই। ফলে পাখিগুলো প্রায় ২০ বছর ধরে নিশ্চিন্তে এ গ্রামে বসবাস করে আসছে।

jagonews24

নূরুল হক মাস্টারের ছেলে শিমুল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, প্রায় ২০ বছর আগে এক শীতের সকালে পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে আমাদের। পরে বাইরে বের হয়ে দেখতে পাই অসংখ্য পাখি আমাদের শিমুল আর কড়ই গাছে আশ্রয় নিয়েছে। প্রথমে ভেবেছিলাম এগুলো বক পাখি; পরে জানতে পারি এগুলো শামুকখোল পাখি। পাখিগুলো কালো ও ধূসর বর্ণের। এরপর থেকেই এই গাছেই আশ্রয় নেয় তারা। এমনিতে পাখিগুলো গাছেই থাকে। তবে ঝড় বৃষ্টির দিনে মানুষের বাড়ি-ঘরে আশ্রয় নেয়। মাঝে মধ্যে এদেরকে চিড়া-মুড়িও খেতে দেন তারা।

jagonews24

জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক জাহাঙ্গীর কবীর জাগো নিউজকে বলেন, শামুকখোল অল্প জায়গায় গাদাগাদি করে থাকতে পছন্দ করে। এ পাখির ঠোঁট অনেকটাই যাঁতাকলের মতো কাজ করায় শক্ত শামুক অনায়াসে গলাধকরণ করতে পারে।

পাখিগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারলে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও জানান তিনি।

এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।