ঈদের আগেই ঘরে ফিরলেন হাবিবুর, তবে লাশ হয়ে

জুয়েল সাহা বিকাশ
জুয়েল সাহা বিকাশ জুয়েল সাহা বিকাশ , জেলা প্রতিনিধি, ভোলা
প্রকাশিত: ০২:২৯ পিএম, ০৬ জুন ২০২২
নিহত মো. হাবিবুর রহমান

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে কম্পিউটার অপারেটরের চাকরি করতেন মো. হাবিবুর রহমান (২৫)। কথা ছিলো এবার কোরবানির ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এলে বিয়ে করবেন। বিয়ের জন্য পাত্রীও দেখতে শুরু করেছেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু শনিবার কর্মস্থলে অগ্নিকাণ্ডে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি।

হাবিবুর রহমানের মৃত্যুতে শোকের মাতম চলছে তার পরিবারে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন তার মা হোসনে আরা বেগম।

মা হোসনে আরা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, নভেম্বর মাসের শেষের দিকে ওর (হাবিবুর রহমান) খালুর মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়ি আসে। এরপর ৭-৮ মাসের মধ্যে আসেনি। দুর্ঘটনার দিন সকালে ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। ছেলে বলেছিল, ‘মা রোজার ঈদেতো আসিনি। এবার কোরবানির ঈদে ৪ দিন ছুটি ফাইনাল হয়েছে। বেতন ও বোনাস পেলেই আসবো।’

jagonews24

তিনি আহাজারি করে বলেন, ‘এখন আমার ছেলে কেন লাশ হয়ে ফিরে এলো। আমি এখন কী নিয়ে বাঁচবো।’

হাবিবুর রহামনের নানা মো. সিদ্দিকুর রহামন জাগো নিউজকে জানান, হাবিবুর রহমানের বয়স যখন ১-২ বছর তখন তার বাবা মো. সাহাবুদ্দিন মিয়া মারা যান। ওর বাবার বাড়ি ছিলো পটুয়াখালী জেলার আমতলীতে। বাবা মারা যাওয়ার পর মেয়ে ও ছোট হাবিবুর রহমানকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসি। এখান থেকেই হাবিবুর রহমান পড়াশুনা ও বড় হয়েছে। প্রায় ৫ বছর আগে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে কম্পিউটার অপারেটরের চাকরিতে যোগদান করে হাবিবুর। সব কিছু ভালোভাবেই চলছিল। হাবিবুর রহামনের জন্য আমার বাড়ির সামনে একটি ঘর নির্মাণ করে দিয়েছি। কথা ছিলো এবার কোরবানির ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এলে তাকে বিয়ে করাবো। কিন্তু হঠাৎ সে পৃথিবী থেকে চলে গেলো।

তিনি আরো জানান, ঘটনার দিন আমার ছেলে নূরনবী দুর্ঘটনার কথা শুনে ছুটে যায় সেখানে। সারারাত সেসহ তার ১০-১২ জন বন্ধু হাবিবুর রহমানকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে রোববার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স এলে সেখানে গিয়ে হাবিবুর রহমানের মরদেহ পায় তারা।

হাবিবুর রহামনের মরদেহ সোমবার (৬ জুন) সকালে তার নানার বাড়ি দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়ে পুরো পরিবার। তাদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে এলাকার আকাশ বাতাশ। পরে জানাজা শেষে নানার বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়।

jagonews24

এদিকে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের নির্দেশে তার ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মইনুল হোসেন বিপ্লব ছুটে যান নিহত হাবিবুর রহমানের বাড়িতে। নিহতের জানাজায় অংশ নেন তিনি। পরে হাবিবুরের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেন এবং তোফায়েল আহমেদের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।

ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, নিহতের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।