আসার সুযোগ থাকলেও বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারতে যেতে পারছেন না যাত্রীরা
পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি ইমিগ্রেশন দিয়ে আসার সুযোগ থাকলেও ভারত যেতে পারছেন না পাসপোর্টধারী যাত্রীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেকে। বাধ্য হয়ে লালমনিরহাটেরর বুড়িমারি আথবা যশোরের বেনাপোল দিয়ে ভারতে যেতে হচ্ছে তাদের। এতে সময় অপচয়ের পাশাপাশি বেড়েছে খরচও। এ নিয়ে ভারত ভ্রমণকারীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনার শুরুতে ভারত ভ্রমণের ভিসাসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াত সীমিত করা হয়। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ৭ এপ্রিল থেকে ফের ভারতের ভ্রমণসহ সব ধরনের ভিসা চালু করা হয়। কিন্তু পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তবে যাত্রীরা আসতে পারছেন।
শনিবার (৩০ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ইমগ্রেশন চেকপোস্টে যাত্রী নেই বললেও চলে। উভয় দেশের মধ্যে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও বন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে মানুষ যাতায়াত করতে দেখা যায়নি। ব্যাবসায়িক এবং বিশেষ কোনো ভিসা ছাড়া এ চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকরা ভারত যাতায়াত করতে পারছেন না। এ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট যেন স্থবির হয়ে আছে।
এ নিয়ে ৩০ জুলাই বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে বাংলাদেশি এবং ভারতীয় ব্যাবসায়ী প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উভয় দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে শিগগির ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারত যাতায়াতের অনুমতির দাবি জানানো হয়।
পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই-খুদা মিলন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে আমাদের ব্যাসায়ীরা প্রয়োজনে খুব সহজেই যাতায়াত করতে পারতেন। কিন্তু ভারতীয় ভিসায় এ চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াতের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের অনেককে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারি-চেংরাবান্ধা রুট দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সময়ও বেশি লাগছে।’
পঞ্চগড় জেলা শহরের রামের ডাংগা মহল্লার ফারুক আহামেদ বলেন, ‘আমাকে শারীরিক চেকআপসহ চিকিৎসার জন্য ভারতের শিলিগুড়ি যেতে হয়। আমি ভারতীয় ভিসা সেন্টারে বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি রুট চেয়ে আবেদন করি। কিন্তু আমাকে লালমনিরহাটের বুড়িমারি-চেংরাবান্ধা ইমিগ্রেশন দিয়ে যাতায়াতের অনুমতি দেয়। বাধ্য হয়ে আমাকে সেই স্থলবন্দর দিয়ে যেতে হয়। এতে আমার যাতায়াত খরচ বেশি হয়েছে এবং সময়ও বেশি লেগেছে। বাংলাবান্ধা রুট না দেওয়ায় আমি আর নতুন করে ভিসার আবেদন করিনি।’
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী আহসান হাবিব বলেন, ‘আমাদের অনেককেই ভারত, নেপাল এবং ভুটানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে যতায়াত আমাদের জন্য অনেক সহজ। কিন্তু এখন আমাদের চেংড়াবান্ধা দিয়ে যেতে হচ্ছে। এ নিয়ে আমরা বৃহস্পতিবার উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে বৈঠক করেছি। আমরা দ্রুত এ বন্দর দিয়ে ভারতীয় ভিসায় যাতায়াতের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি ইমিগ্রেশন) মো. নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এখন ট্যুরিস্ট ভিসা বা মেডিকেল ভিসা চালু থাকলেও এ রুট দিয়ে যাতায়াতের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এজন্য আমাদের এ রুট দিয়ে ভারত যাতায়াতকারীদের সংখ্যা বেশ কমে গেছে।
বাংলাবান্ধা আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি আব্দুল লতিফ তারিন জাগো নিউজকে বলেন, দেশের একমাত্র চর্তুরদেশীয় এ স্থলবন্দর দিয়ে ব্যাবসায়ী, রোগী, শিক্ষার্থীসহ পর্যটকরা ব্যাপকভাবে ভারতে যাতায়াত করতেন। করোনার পর সব স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন চালু হলেও বর্তমান ভারতীয় ভিসায় আমাদের এখানে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এ রুটে ইমিগ্রেশন চালুর দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করা হয়েছে। উভয় দেশের ব্যাসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করে দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কবে নাগাদ অলিখিত এ নিষেধাজ্ঞা উঠবে জানি না।’
ইমিগ্রেশনের পুলিশ সুপার মো. ইউসুফ আলী জাগো নিউজকে বলেন, ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের পক্ষ থেকে কোন সমস্যা নেই। পূর্বের মেডিকেল ভিসা বা অন্য যে কোনো ভিসায় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর উল্লেখ আছে, তারা এ রুট দিয়েই যাতায়াত করতে পারছেন। বিষয়টি ভারতীয় হাইকমিশনের পারমিশনের ওপর নির্ভর করে। ভারতীয় হাইকমিশনের ভিসা সেন্টার ভিসা দেওয়ার সময় ভিসায় রুট উল্লেখ করে দেন। এ রুট ব্যবহারের অনুমতির বিষয়টিও তাদের এখতিয়ারভুক্ত।
এসজে/এমএস