মেহেরপুরে নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প সংকট, বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মেহেরপুর
প্রকাশিত: ১২:১২ পিএম, ০৭ অক্টোবর ২০২২

মেহেরপুরে দুই সপ্তাহ ধরে নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প দিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ট্রেজারিতে সংকটের সুযোগে ভেন্ডাররা (সরবরাহকারী) সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দিগুণ দামে স্ট্যাম্প বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে গত দুই সপ্তাহ ধরে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন স্ট্যাম্প ক্রেতারা।

জানা গেছে, দুই সপ্তাহ ধরে মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের ট্রেজারিতে সরকারি ১০০ টাকা মূল্যের নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পের সংকট দেখা দিয়েছে। স্ট্যাম্প ভেন্ডাররা বারবার আবেদন করলেও জেলা প্রশাসন থেকে কোনো স্ট্যাম্প বরাদ্দ দিতে পারেনি। ভেন্ডারগুলোতে ১০০ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প পাওয়া না গেলেও কালোবাজারিদের কাছে দ্বিগুণ দামে তা মিলছে।

সরেজমিনে মেহেরপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, নিমতলা আইনজীবী সমিতি চত্বর, দলিল লেখক সমিতি চত্বরে অবস্থান করে স্ট্যাম্প ভেন্ডার, দলিল লেখক ও গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে এ ভোগান্তির কথা জানা গেছে।

মেহেরপুর শহরের বাসিন্দা জায়েদ হোসেন ব্যবসায়িক চুক্তিপত্র করার জন্য ১০০ টাকার তিনটি স্ট্যাম্প কিনবেন বলে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এসেছেন। স্ট্যাম্প না পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভেন্ডারদের খুপড়ি ঘরে। জানতে চাইলে জাগো নিউজকে জায়েদ বলেন, এখন পর্যন্ত ১০০ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প কিনতে পারিনি। এখানকার কোনো ভেন্ডারে স্ট্যাম্প পাইনি। তবে বিপ্লব পাল নামে এক স্ট্যাম্প ভেন্ডারে তিনটির দাম ৫০০ টাকা চাইলো।

একই কথা বললেন শহরের সাজিদ রানা। তিনি বলেন, কোনো জায়গায় স্ট্যাম্প না পেয়ে বিপ্লব পাল নামে এক ভেন্ডারের কাছে গিয়ে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প ৪৫০ টাকায় কিনতে হয়েছে।

সদর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের পলাশ হোসেন বলেন, ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প ৫০০ টাকা দিয়েও কিনতে পারছিলাম না। পরে অনেক কষ্টে নিমতলার একটি জায়গা থেকে ৬০০ টাকা দিয়ে স্ট্যাম্প কিনলাম।

খাইরুল স্ট্যাম্প ভেন্ডারের মালিক খাইরুল ইসলাম বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ মেহেরপুর ট্রেজারি থেকে আমাদের নন জুডিসিয়াল ১০০ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প দিতে পারেনি। আমরা জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ছি। অথচ কালোবাজারিদের কাছে স্ট্যাম্প মিলছে। ১০০ টাকার স্ট্যাম্প ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এটা প্রশাসনের দেখা উচিত।

দলিল লেখক ফুজায়েল হোসেন বলেন, একশো টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প না পেয়ে ২০ টাকা ৫০ টাকার স্ট্যাম্প দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে আমরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছি। আগে যেখানে ১০ পাতা লিখতে হতো এখন সেখানে ১৫ থেকে ১৮ পাতা লিখতে হচ্ছে।

একই কথা জানালেন দলিল লেখক আব্দুল আজিজ। তিনি বলেন, সময় লাগছে বেশি। আবার গ্রাহকদের কাছ থেকে নানা ধরনের কথা শুনতে হচ্ছে। ব্যাংকে গেলেও ব্যাংকের কর্মকর্তারা নানা কথা শোনাচ্ছেন।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন দলিল লিখছি। আমার জীবনে ২০০৮ সালে একবার স্ট্যাম্প ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। আর এ বছর চার মাসের মধ্যে দুই বার স্ট্যাম্প ঘাটতি দেখা গেলো।

আব্দুল আজিজ অভিযোগ করে বলেন, ট্রেজারি শাখার বড়বাবু আরেফিন রেজা যোগদানের পর থেকেই এই সংকট তৈরি হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ভেন্ডার বলেন, নতুন করে ভেন্ডার লাইসেন্স নবায়ন করতে গেলে জেলা প্রশাসকের এলআর ফান্ডে পাঁচ হাজার টাকা করে জমা দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন ট্রেজারি শাখার কর্মকর্তা আরেফিন রেজা। অথচ এর আগে নবায়নের সময় ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা দিতে হয়েছে। টাকা না দিলে লাইসেন্স বাতিল ও নবায়ন না করারও হুমকি দিচ্ছেন তিনি। ট্রেজারি চালান করলেও স্ট্যাম্প দেবেন না বলেও হুমকি দিচ্ছেন তিনি।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আরেফিন রেজা বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। কয়েকদিন ট্রেজারিতে স্ট্যাম্প ছিল না, এখন চলে এসেছে। আর সংকট থাকবে না।

জানতে চাইলে মেহেরপুর সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম রব্বানী সোহেল বলেন, দু-একদিনের মধ্যেই সংকট দূর হয়ে যাবে। আমরা চাহিদা দিয়েছিলাম। এরই মধ্যে স্ট্যাম্প ট্রেজারিতে পৌঁছেছে।

সংকটের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিজি প্রেসে স্ট্যাম্প ছাপা হয়। জেলাতে স্ট্যাম্পের চাহিদা বেড়েছে এবং বিজি প্রেস থেকে আসতে দেরি হয়েছে। এছাড়া কালোবাজারে স্ট্যাম্প বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

আসিফ ইকবাল/এমআরআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।