শুক্রবার ২ শতাধিক মানুষ বিনামূল্যে খাবার পান মাহিমা রেস্টুরেন্টে
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এ আকাশছোঁয়া দামে অধিকাংশ মানুষ নিজের সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় দুই শতাধিক মানুষকে সপ্তাহে একবার বিনামূল্যে খাওয়ানোর কথা আমরা চিন্তা করতেই পারি না। অথচ প্রায় ছয় বছর ধরে এ কাজটিই করছেন এক রেস্টুরেন্ট মালিক। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর শহরের মাহিমা রেস্টুরেন্টে প্রতি শুক্রবার দুই শতাধিক অসহায় মানুষকে বিনামূল্যে খাওয়ানো হয়।
ওই রেস্টুরেন্টে প্রতি শুক্রবার বিনামূল্যে খেতে আসেন রহিমা বেগম। ভিক্ষাবৃত্তি করে চলা রহিমা সপ্তাকে এই একদিন ভালো খেতে পারেন। জাগো নিউজকে রহিমা বলেন, ‘গেছে শুক্করবারে আইতাম পারছি না, এর লাগি ১০-১২ দিনের মাঝেঔ ভালা খানি খাওয়া অইছে না। আজকে পেট ভইরা খাইলাম।’ (গত শুক্রবার আসতে পারিনি। এজন্য ১০-১২ দিনের মধ্যে ভালো খাবার খাওয়া হয়নি। আজ পেট ভরে খেলাম।)

হিরণ মিয়া নামে আরেক ভিক্ষুক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ভাত খাইতাম পারি না, বেটায় রুটি কাইট্টা মাংস দিয়া দিছইন। হখল শুক্রবারেঔ ই-কাম করইন তাইন’। (আমি ভাত খেতে পারি না। হোটেলের মালিক রুটি টুকরো করে মাংস দিয়ে দিয়েছেন। প্রতি শুক্রবার তিনি এভাবে খাওয়ান।)
প্রবাসী অধ্যুষিত সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর শহরের ব্যস্ততম এলাকায় অবস্থিত মাহিমা রেস্টুরেন্টে প্রতি শুক্রবারই এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
গত শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে ওই রেস্টুরেন্টে যান এ প্রতিবেদক। এ সময় ওই রেস্টুরেন্টের কর্মী মুরাদ আহমদ বলেন, ‘আপনারা ভেতরের কক্ষে বসুন। সামনে পুরো কক্ষে এখন ভিক্ষুক ও এতিমদের খাবার দেওয়া হবে।’

এতো ভিক্ষুক ও এতিমদের কে খাওয়াবে জানতে চাইলে মুরাদ বলেন, ‘ইখানোতো শুক্রবারে হারা বছরঔ তারা খায়’। (এখানে সারাবছরই শুক্রবার তারা খায়।)
জগন্নাথপুর পৌর শহরের ব্যারিস্টার আব্দুল মতিন মার্কেটে ২০১৭ সালে চালু হয় মাহিমা রেস্টুরেন্ট। শুরু থেকেই রেস্টুরেন্ট মালিক মকবুল হোসেন ভূঁইয়া প্রতি শুক্রবার দুপুরে অসহায় মানুষদের বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা করে আসছেন। খাবার হিসেবে ভাতের সঙ্গে ডাল, সবজি ও মুরগির মাংস দেওয়া হয়।

রেস্টুরেন্ট কর্মচারীরা জানান, প্রথমদিকে ৩০-৪০ জন করে প্রতিবন্ধী ও হতদরিদ্ররা এসে খেতেন। ধীরে ধীরে সেটি বাড়তে থাকে। এখন দুই শতাধিক মানুষের খাবার তৈরি করতে হয়। শুধু তাই নয়, মাহিমা রেস্টুরেন্টের মালিক মকবুল হোসেন বন্যার সময় খিচুড়ি রান্না করে বন্যার্তদের বাড়ি বাড়ি পাঠিয়েছেন। সম্প্রতি উপজেলার শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া এতিমখানার এতিমদেরও শুক্রবার দুপুরে খাওয়ানো হচ্ছে তার উদ্যোগে।
স্থানীয় বাসিন্দা জুয়েল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে এখনও মানবতা, মমত্ববোধ বেঁচে আছে। মকবুল হোসেন এ সত্য প্রমাণ করেছেন।

এসব বিষয়ে মকবুল হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি প্রথমে এসব কাজের প্রচার করতে আগ্রহী নন বলে জানান। তবে তার এ মহৎ কাজ অন্যরা জানতে পারলে তারাও উৎসাহ পাবেন বললে মকবুল কথা বলতে রাজি হন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আছে, খরচও বেড়েছে। এরপরও আমার ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে না। প্রতি শুক্রবার ২০০ জন অসহায় মানুষকে খাওয়ানোর খরচও ব্যবসার আয় থেকেই চলছে বলে জানান তিনি। যতদিন রেস্টুরেন্ট চালাবেন, ততদিন এভাবে অসহায় মানুষের পাশে থাকবেন বলে জানান।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজেদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এক শুক্রবার রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে দেখেছি ওই ব্যবসায়ী অসহায় মানুষদের বিনামূল্যে খাওয়ান। আসলে এই কাজ করে তিনি মন থেকেই তৃপ্তি পান।
কেএসআর/এমএস