জলাবদ্ধতা

৭ বছর ধরে ৫০০ বিঘা ফসলি জমি পানির নিচে, কৃষকের সর্বনাশ

শেখ মহসীন
শেখ মহসীন শেখ মহসীন ঈশ্বরদী (পাবনা)
প্রকাশিত: ০২:২১ পিএম, ০৯ নভেম্বর ২০২২

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দুই গ্রামের প্রায় ৫০০ বিঘা ফসলি জমি সাত বছর ধরে পানির নিচে পড়ে আছে। অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন ও পানি নিষ্কাশনের নালা সংস্কার না করায় এ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ফলে তিন ফসলি জমি হলেও কোনো আবাদ করতে পারছেন কৃষকরা। জলাবদ্ধতা নিরসনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।

কৃষকরা জানান, উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মারমী ও শ্যামপুর গ্রামে ফসলি মাঠে প্রায় ৫০০ বিঘা জমি আছে। এসব জমিতে বছরে তিনটি ফসল ফলতো। এ আবাদেই এলাকার কৃষকের আর্থিক সমৃদ্ধি আসতো। সাত বছরের বেশি সময় ধরে এসব জমি জলাবদ্ধতায় ডুবে আছে। এমনকি ৫০০ বিঘা জমি চাষাবাদের জন্য চারটি গভীর নলকূপও (বোরিং) আছে। এসব গভীর নলকূপের ঘরগুলোও জলাবদ্ধতায় ডুবে আছে।

এ মাঠের পানি নিষ্কাশনে ২০ বছর আগে একটি নালা তৈরি করা হয়েছিল। নালাটি মারমী-শ্যামপুর গ্রামের মধ্য দিয়ে কমলা নদীতে গিয়ে পড়েছে। নালাটি খননের পর সরকারি উদ্যোগে পুনঃখনন কিংবা সংস্কার হয়নি। একই সঙ্গে এ নালার দুপাশে কৃষি জমি খনন করে অপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে মাছ চাষের পুকুর। পুকুর খননের মাটি ও পুকুর পাড়ের কলাগাছ কেটে নালাতে ফেলায় এ নালা এখন অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। ফলে বছর জুড়েই ডুবে থাকছে ৫০০ বিঘা ফসলি জমি।

৭ বছর ধরে ৫০০ বিঘা ফসলি জমি পানির নিচে, কৃষকের সর্বনাশ

মারমী পূর্বপাড়া গ্রামের কৃষক মোস্তাক আলী প্রামানিক বলেন, ‘সাত বছর ধরে আমার তিন বিঘা জমি পানির নিচে। জমিতে এক সময় ধান, শিম, ঢ্যাঁড়শ, পাট, সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করতাম। তা দিয়েই আমার সংসার চলতো। বর্তমানে আবাদ বন্ধ থাকায় আমার সংসারের যে কি অবস্থা তা বলে বোঝানো যাবে না।’

মারমী গ্রামের আব্দুল মালেক বলেন, এখানে তিন বিঘা জমি আছে। এ জমি চাষাবাদ করে আমার সংসার চলতো। ৬ সদস্যের পরিবার ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার মতো অবস্থা নেই। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়েছিলাম। তারা আশ্বস্ত করেছে নালা কেটে জলাবদ্ধতা নিরসন করে দেবে। যদি দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতো তাহলে চাষাবাদ করে ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচতে পারতাম।’

শ্যামপুর গ্রামের মফিজ উদ্দিন বলেন, সব জমি হাঁটু বা কোমর সমান পানিতে ডুবে আছে। খাল বা নালা খনন বা পুনঃখনন করা না হলে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে না। আমাদের দুঃখ দুর্দশার কথা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ফসলি জমি পানির নিচে আর সামান্য বৃষ্টি হলেই বাড়িঘরে ঢুকে পড়ছে পানি। আমরা ঘরে-বাইরে কোথাও ভালো নেই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) রফিকুল ইসলাম মাঝি জাগো নিউজকে বলেন, যারা প্রান্তিক কৃষক তারা এ জমি আবাদ করেই সংসার চালাতেন। তারা প্রায়ই আমার কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করে। আমি নিজে কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে ইউএনও ও কৃষি কর্মকর্তার কাছে গিয়েছি। তারা জলাবদ্ধতা নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’

৭ বছর ধরে ৫০০ বিঘা ফসলি জমি পানির নিচে, কৃষকের সর্বনাশ

দাশুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বকুল সরদার জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি জানার পর দ্রুত ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছন। আশা করি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জাগো নিউজকে বলেন, সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকরা কোনো ফসল চাষ করতে পারছেন না। জলাবদ্ধতা দ্রুত নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবো। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না। অথচ এখানে জলাবদ্ধতার কারণে কয়েকশ বিঘা জমি চাষাবাদ করা যাচ্ছে না।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পি এম ইমরুল কায়েস জাগো নিউজকে বলেন, স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে খাল খনন করে দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি।

এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।