নারায়ণগঞ্জে স্বপন হত্যায় একজনের ফাঁসি, অপরজনের যাবজ্জীবন
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত কাপড় ব্যবসায়ী স্বপন কুমার সাহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একজনকে মৃত্যুদণ্ড ও আরেকজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের দুইজনেক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) দুপুর দেড়টায় নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক উম্মে সরাবন তহুরা এ রায় দেন। মামলায় আর একজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পিন্টু দেবনাথ ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত রত্মা রানী চক্রবর্তী। অপর আসামি আব্দুল্লাহ আল মামুনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণার পর স্বপন কুমারের বড় ভাই অজিত কুমার সাহা বলেন, আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট। রাষ্ট্রপক্ষের কাছে আমাদের দাবি অতিদ্রুত যেন রায়টি কার্যকর করা হয়।
এর আগে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর কাপড় ব্যবসায়ী স্বপন কুমার সাহাকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পর ২০১৮ সালে ভোলানাথ জুয়েলার্সের মালিক প্রবীর ঘোষের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্বপন কুমার সাহাকে হত্যার রহস্য উদ্ধার করা হয়। এই দুইটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। স্বপন কুমার সাহা হত্যার রহস্য উদ্ধারের পর এ ঘটনায় মামলা করা হয়। একই সঙ্গে মামলায় তিনজনকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে একজনকে ফাঁসি আরেকজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও আরেকজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মাকসুদা আহম্মেদ জাগো নিউজকে বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি পিন্টু দেবনাথ ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রত্মা রানী চক্রবর্তীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। একই সঙ্গে ভিকটিমের মরদেহ সাত টুকরা করে বস্তাবন্দী করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দিয়েছিল। পরে সেই হত্যাকাণ্ডের আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। মোট ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের ভিত্তিতে আদালত আজ এ রায় ঘোষণা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পিন্টু দেবনাথ নারায়ণগঞ্জের আরেকটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছিল। সেই মামলার ভিকটিম ছিল ভোলানাথ জুয়েলার্সের মালিক প্রবীর ঘোষ। তাকে হত্যা করে সাত টুকরো করে সেফটি ট্যাংকিতে রেখে দিয়েছিল।
কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, পিন্টু দেবনাথ এবং স্বপন কুমার পরস্পর বন্ধু ছিল। তারা একসঙ্গে চলাফেরা করতো। এই পিন্টু দেবনাথ স্বপন কুমারকে উৎসাহ দিয়ে ইন্ডিয়া নিয়ে যায়। একই সঙ্গে ইন্ডিয়া ফ্ল্যাট কিনে দেওয়ার কথা বলে স্বপন কুমারের কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা নেন। কিন্তু পিন্টু দেবনাথ স্বপন কুমারের নামে ফ্ল্যাট না কিনে ভাগ্নির নামে ফ্ল্যাট কিনেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়।
তিনি আরও বলেন, এই মনোমালিন্যের এক পর্যায়ে স্বপন কুমারকে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং তারই অংশ হিসেবে বান্ধবী রত্মা রানীকে দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলায়। একই সঙ্গে রত্মা রানীর বাসায় স্বপন কুমারকে দাওয়াত দেওয়া হয় এবং সেখানে খাবারের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করায়। পরে স্বপন কুমার অচেতন হয়ে গেলে রত্মা রানীর বাসায় থাকা শীল পাটা মাথা আঘাত করে হত্যা করে। হত্যার পর বাসায় থাকা দা দিয়ে মরদেহ খণ্ড খণ্ড করে বাজারের ব্যাগে ভরে উপরে সবজি রেখে শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়।
আসাদুজ্জামান বলেন, এটা একটা নির্মম হত্যাকাণ্ড। এ হত্যার ঘটনায় তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে পিন্টু দেবনাথকে মৃত্যুদণ্ড রত্মা রানীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অপর আসামি আব্দুল্লাহ আল মামুনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
মোবাশ্বির শ্রাবণ/এএইচ/জেএস/জিকেএস