শীতে দুস্থদের কম্বল দিতে মজুরিতে ধান কাটছে একদল শিক্ষার্থী

মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুরুল ইসলাম ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ১০:১১ এএম, ০২ ডিসেম্বর ২০২২

অডিও শুনুন

অসহায় দুস্থদের কম্বল ও শীতবস্ত্র কিনে দিতে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় মজুরিতে ধান কাটছে একদল তরুণ শিক্ষার্থী। এতে প্রশংসায় ভাসছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের নয়ানগর বাউশালীপাড়া গ্রামে গিয়ে ধান কাটতে দেখা যায় তাদের।

খোঁজ নিয়ে যায়, মাওহা ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বন্ধুর বাঁধন একতা ছাত্র সংঘ’। এতে একদল তরুণ স্বেচ্ছায় কাজ করছেন। তারা দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। পাশাপাশি প্রতিবছর আমন ও বোরো মৌসুমে মজুরি ভিত্তিতে ধান কেটে ও চারা রোপণ করে অর্থ সংগ্রহ করেন এসব শিক্ষার্থী। পরে সে টাকায় গ্রামের অসহায় ও দুস্থদের সহযোগিতা করে থাকেন তারা।

jagonews24

এবার দুস্থদের কম্বল ও শীতবস্ত্র কিনে দিতে শিক্ষার্থীরা ছুটিতে বাড়ি এসে মজুরি ভিত্তিতে কৃষকের আমন ধান কাটছেন। ধান কাটার পর মাড়াই করে কৃষকের বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। প্রতি কাঠা জমির ধান বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার বিনিময়ে ৭০০ টাকা পাচ্ছেন একেকজন শিক্ষার্থী।

কৃষক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও গ্রামে ধান কাটার শ্রমিক সংকট। শ্রমিক দিয়ে প্রতি কাঠা জমির ধান কাটার পর মাড়াই করে বাড়ি পৌঁছাতে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা লাগে। কিন্তু সংগঠনের সদস্যরা ৭০০ টাকায় করে দিচ্ছে।’

আনন্দ মোহন কলেজের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আজহারুল করিম বলেন, ‘সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমন মৌসুমে প্রায় ৫০ কাঠা জমির ধান কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ধান কাটার প্রাপ্ত অর্থ থেকে গ্রামের ১০০ জন দুস্থ মানুষকে কম্বল উপহার দেওয়া হবে।’

সংগঠনটির সভাপতি শাহীন আলম বলেন, তিন দিন ধরে আমরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দল বেঁধে ধান কাটছি। গ্রামে ধানকাটা শ্রমিকের সংকট থাকায় কৃষকরাই জমির ধান ঘরে তুলতে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

এ বিষয়ে মাওহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহামদ আল ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, পড়াশোনার জন্য এ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা গ্রামের বাইরে অবস্থান করলেও গ্রামের দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের মুখ তাদের চোখ এড়ায় না। ধান কাটার মৌসুমে তারা দলবেঁধে কাজ করে অর্থ উপার্জন করে। সে টাকায় অভাবী মানুষকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেন। তাদের কাজ মাওহার সুনাম বাড়িয়েছে।

jagonews24

গৌরীপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান মারুফ জাগো নিউজকে বলেন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির কিছু ইতিবাচক কাজ আমাদের নজরে এসেছে। বিভিন্ন সেবামূলক কাজের মাধ্যমে তারা পাড়াগাঁয়ে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে এভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালে শীতার্তদের দুর্ভোগ লাঘব হবে।

২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল মাওহা ইউনিয়নে একদল শিক্ষার্থীর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বন্ধুর বাঁধন একতা ছাত্র সংঘ’। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনের সদস্যরা এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ, দুস্থদের ঈদ উপহার, সড়ক সংস্কার, কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা, বৃক্ষরোপণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রশংসা কুড়াচ্ছে।

এসজে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।