কুয়েতে প্রতারণার শিকার আইনজীবীসহ শতাধিক বাংলাদেশি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ০২:৩৫ পিএম, ০৩ ডিসেম্বর ২০২২
প্রতারক রুবেল

আকামা পরিবর্তনসহ আইনি সহায়তার জন্য একটি ফার্মে জমা দেওয়া ৬০ লাখের বেশি টাকা প্রতারণার শিকার হয়েছে কুয়েতে থাকা শতাধিক বাংলাদেশি। একই সঙ্গে ওই ফার্মের আইনজীবীরও ৩০ লাখ টাকা খোয়া গেছে। প্রায় ৯০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে এক প্রতারক কুয়েত থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

এ ঘটনায় প্রতারিত বাংলাদেশি ও কুয়েতি আইনজীবী বাংলাদেশি দূতাবাসে লিখিত অভিযোগ করেছেন। কুয়েতের বাংলাদেশি দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) মোহাম্মদ আবুল হোসেন জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অভিযুক্ত প্রতারক রুবেল (৪২) ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকার সিরাজনগর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে।

কুয়েতপ্রবাসী যশোর সদর উপজেলার আরবপুর এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ আলী বলেন, কুয়েতে কোম্পানিতে আকামা পরিবর্তনসহ বিভিন্ন আইনি সহায়তার জন্য শতাধিক বাংলাদেশি স্থানীয় ফার্ম ‘ইনফ্রাদ লিগ্যাল গ্রুপ’ এ আবেদন করেছে। সেখানে আইনজীবীর ফি হিসেবে তারা ১৯ হাজার ৭৮৫ কুয়েতি দিনার জমা দিয়েছে। ৬০ লাখ ৮৯ হাজার ১৩৭ টাকার সমপরিমাণ দিনার জমা নেন ওই অফিসে সহকারী হিসেবে কর্মরত রুবেল।

একই সঙ্গে ওই ফার্মের আইনজীবী মুনা আল বাসরির ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৩ টাকার সমপরিমাণ ১০ হাজার কুয়েতি দিনার অফিসে রাখা ছিল। এই ৯১ লাখ ৬৬ হাজার ৭৯০ টাকার কুয়েতি দিনার নিয়ে রুবেল ২৪ জুলাই কাউকে না জানিয়ে দেশে চলে আসে। ঘটনার পরপরই বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রতারিত বাংলাদেশিরা এবং কুয়েতের আইনজীবী মুনা আল বাসরি কুয়েতের বাংলাদেশি দূতাবাসে লিখিত অভিযোগ করেন।

প্রতারিত বাংলাদেশি বগুড়ার গাবতলী এলাকার মোহাম্মদ রানা অভিযোগ করেন, তিনি ১৮ বছর ধরে কুয়েতে অবস্থান করছেন। আকামা পরিবর্তনের জন্য তিনি ২০০ দিনার দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আইনি সহায়তা না দিয়েই প্রতারক রুবেল তারসহ শতাধিক বাংলাদেশির টাকা নিয়ে পালিয়েছে।

‘ইনফ্রাদ লিগ্যাল গ্রুপ’র আইনজীবী মুনা আল বাসরি জানান, প্রতারক রুবেল তার ও তার ক্লাইন্টদের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। এমনকি যাদের টাকা নিয়েছে তাদের কাগজপত্রও নষ্ট করে ফেলেছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি দূতাবাসে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয় কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত কাউন্সিলর (শ্রম) মোহাম্মদ আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, ১০০ বাংলাদেশি ও কুয়েতি আইনজীবীর অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, ঢাকার জেলা প্রশাসকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে।

মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, প্রায় সময়ই এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। নানান কায়দার প্রতারকরা কুয়েতি ও বাংলাদেশিদের কাছ থেকে কুয়েতি দিনার সংগ্রহ করে। কুয়েতিদের কখনও বাড়ি করা কিম্বা ব্যবসায় বিনিয়োগ অথবা বাংলাদেশিদের কাছ থেকেও ব্যবসাসহ নানান লাভজনক খাতের কথা বলে টাকাগুলো সংগ্রহ করে। কুয়েতি দিনারের মূল্যমান অনেক বেশি। তাই ১০ হাজার দিনার সংগ্রহ করতে পারলেই গোপনে তারা দেশে পালিয়ে যায়। তখন পাসপোর্টের ঠিকানা ধরে তাকে খুঁজে বের করে টাকা উদ্ধারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতারকরা আর ওই ঠিকানায় ফিরেন না। ফলে তাদের আটক বা টাকা উদ্ধার করা অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।

তিনি আরও বলেন, এই দুয়েকজন বাংলাদেশি প্রতারকের জন্য বিদেশে যেমন দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়, তেমনি প্রবাসী বাংলাদেশিরাও বিপাকে পড়েন। তবে ‘ইনফ্রাদ লিগ্যাল গ্রুপ’র আইনজীবী মুনা আল বাসরি কথা দিয়েছেন তিনি ওই বাংলাদেশিদের আইনি সেবাটি দিবেন।

প্রতারণার ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য দেশে ফিরে আসা রুবেলের মোবাইল ফোনে একাধিক বার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

মিলন রহমান/জেএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।