গানের কথা বলে ডেকে নিয়ে দুই শিল্পীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট
প্রকাশিত: ০৮:২৬ পিএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০২২

সিলেটে গানের অনুষ্ঠানের কথা বলে ডেকে এনে হাওরে নিয়ে মায়ের সামনে দুই শিল্পীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খবর পেয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে থানায় কয়েকদিন আটকে রাখলেও হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠায়নি। উল্টো তাদের ধর্ষণ মামলা না করতে চাপ দেন জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) সালা উদ্দিন। পুলিশ ধর্ষণ মামলা না নিয়ে অপহরণ মামলা দেয়।

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে সিলেট প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ আনা হয়।

ধর্ষণের শিকার এক তরুণীর (১৯) মা ও বাউল শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট সিলেট সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ আনেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাউল শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট সিলেটের সভাপতি শাহ তোফাজ্জুল ভান্ডারি।

এ ঘটনায় মামলা করা হলেও পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারে গড়িমসি করছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সংবাদ সম্মেলনকারী নারীর (৫৫) বিবাহিত মেয়ে (১৯) ও আরেক কিশোরী (১৫) পেশাদার বাউল শিল্পী। গত ৩১ অক্টোবর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ইছাকলস গ্রামের মৃত শুকুর উদ্দিনের ছেলে ফয়জুল হকের সঙ্গে ২ নভেম্বর কোম্পানীগঞ্জের পুটামারা গ্রামের ভানুদাসের বাড়িতে একটি অনুষ্ঠানে গান করার জন্য দুজন নারী বাউল শিল্পী পাঠানোর মৌখিক চুক্তি হয়।

ফয়জুলের কথামতো ২ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই নারী তার শিল্পী মেয়ে ও মেয়ের স্বামী এবং অপর কিশোরী বাউল শিল্পীকে নিয়ে জালালাবাদ থানার তেমুখী পয়েন্ট থেকে একটি প্রাইভেটকারযোগে যাত্রা শুরু করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, এসময় প্রাইভেটকারের পাশাপাশি সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে অভিযুক্ত ফয়জুলের সঙ্গে তার ৭-৮ জন সঙ্গী ছিলেন। পথে তারা শিল্পীদের গানের অনুষ্ঠানের দিকে না গিয়ে জালালাবাদ থানার শিবেরবাজার এলাকার বাছনা বিলের দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। শিল্পীরা এসময় পথ বদলের বিষয়টি জানতে চাইলে তাদের ভয় দেখানো হয়। পরে অটোরিকশার যাত্রীরা নেমে অস্ত্রের মুখে শিল্পীদের জিম্মি করে বিলের ধানক্ষেতে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন।

এসময় বিবাহিত নারী শিল্পীর স্বামী কৌশলে ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চান। পরে জালালাবাদ থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে অভিযুক্তরা পালিয়ে যান। পরে পুলিশ ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

সংবাদ সম্মেলনে তোফাজ্জল ভান্ডারি বলেন, এ ঘটনায় গত ৩ নভেম্বর জালালাবাদ থানায় মামলা করা হয়। তবে ঘটনার পর দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও পুলিশ মাত্র দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে মূল অভিযুক্ত ফয়জুলকে একদিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ আরও তথ্য জানতে পারলেও অন্য আসামিদের ধরতে গড়িমসি করছে। এ বিষয়ে ধর্ষণের শিকার শিল্পীরা জেলা প্রশাসক ও সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে জালালবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা জাগো নিউজকে বলেন, সংবাদ সম্মেলনে করা অভিযোগ সত্য নয়। ফোন পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ভিকটিমদের উদ্ধার করে। পরে তাদের বক্তব্য অনুযায়ী অপহরণ মামলা করা হয়। মামলা রুজু করতে আমরা বিলম্ব করিনি। পরে যখন ভিকটিম দুজন আদালতে জানান তাদের ধর্ষণও করা হয়েছে তখন সঙ্গে সঙ্গে তাদের ওসমানী হাসপাতালে পাঠিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পেলে আসামিদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ধারাও যুক্ত করা হবে।

মহানগর পুলিশের জালালাবাদ এসআই সালা উদ্দিন বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। একাধিকবার এজাহার পড়ে শোনানোর পর তাদের সই নেওয়া হয়েছে। পরে ২২ ধারায় আদালতে জবানবন্দি রেকর্ড করতে ভিকটিমদের কোতোয়ালি থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয। তবে শুক্র ও শনিবার দুদিন বন্ধ থাকায় সেখানে তারা ছিলেন। রোববার আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার পরপরই তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়েছে। তারা প্রথমে ধর্ষণের কথা বলেননি।

ছামির মাহমুদ/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।