বিজয়ের ৫ দিন পর হানাদারমুক্ত হয় ঈশ্বরদী

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি ঈশ্বরদী (পাবনা)
প্রকাশিত: ০৯:৫৯ এএম, ২১ ডিসেম্বর ২০২২

ঈশ্বরদী মুক্ত দিবস আজ (২১ ডিসেম্বর)। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হলেও ঈশ্বরদী হানাদারমুক্ত হয় বিজয়ের পাঁচদিন পর। তখন থেকেই এদিনটি ঈশ্বরদী মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

মুক্তিযোদ্ধারা ১৬ ডিসেম্বর বিকালে ঈশ্বরদী শহরে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ নিয়ে ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রে অবস্থান নেয়। পাশাপাশি বেশ কিছু পাকসেনা ও রাজাকার অবাঙালি অধ্যুষিত লোকোসেড এলাকায় আত্মগোপন করে। পাকিস্তানী সেনারা কোনোভাবেই মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে রাজি না হওয়ায় ২১ ডিসেম্বর নাটোর থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার মঞ্জুর রহমান ঈশ্বরদীতে এসে মিত্রবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার রঘুবীর সিংয়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।

জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে ৭ নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল পাবনা জেলার ঈশ্বরদী। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন লেফট্যানেন্ট কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান। লড়াইয়ের ৯ মাসে ঈশ্বরদীর মাধপুর, খিদিরপুর, দাশুড়িয়ার তেঁতুলতলা, জয়নগরের ভাড়ইমারী, পাকশীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজসহ বিভিন্নস্থানে পাক সেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধারা। সম্মুখযুদ্ধে ঈশ্বরদীতে নিহত হন ২৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এসব যুদ্ধে ৪০ জন শত্রুসেনাও মারা যায়। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার নিরীহ বাঙালি শহীদ হন। ২৯ মার্চ মাধপুরের যুদ্ধ, ৬ নভেম্বর খিদিরপুরের যুদ্ধ এবং ১১ ডিসেম্বর জয়নগরের যুদ্ধসহ অন্যান্য গেরিলা যুদ্ধে এসব মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১ এপ্রিল নূর মহল্লা ও ফতেমোহাম্মদপুর এলাকায় ৩২ জন বাঙালিকে এবং একটি হিন্দু পরিবারের ১১ জন সদস্যদের সবাইকে নির্মমভাবে পাক হানাদাররা হত্যা করে। ঈশ্বরদী বিমান বন্দর, দেশের অন্যতম বড় রেলওয়ে জংশন, তৎকালীন সাঁড়ার বৃহৎ নদীবন্দর এবং উত্তর-দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ঈশ্বরদী কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক সেনারা ঈশ্বরদীতে শক্ত ঘাঁটি তৈরি করে।

বীরমুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ফান্টু বলেন, ৬ ডিসেম্বর ভারতীয় মিত্রবাহিনী প্রবেশের ঘোষণা দিলে কুষ্টিয়া ও যশোর থেকে পালিয়ে আসা পাকিস্তানি সৈন্যরা ট্যাংক কামান অস্ত্র গোলাবারুদ নিয়ে হার্ডিঞ্জ সেতু পার হয়ে ঈশ্বরদী অবস্থান নেয়। পালিয়ে আসা পাকিস্তানি সেনারা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে ঈশ্বরদীর ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্র, কৃষি গবেষণা কেন্দ্র আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলস, ফতেহ মোহাম্মদপুর লোকোসেড এলাকার নাজিমউদ্দিন স্কুলে একত্রিত হতে থাকে পাক সেনাবাহিনী। এদের সঙ্গে মিলিত হতে থাকে নাটোরে ভারতীয় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পরাজিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও মিলিশিয়া বাহিনী।

বিজয়ের ৫ দিন পর হানাদারমুক্ত হয় ঈশ্বরদী

এরই মধ্যে ভারতীয় মিত্রবাহিনী ঈশ্বরদী পৌঁছে যায়। তারা ঈশ্বরদী ডাকবাংলো, সাড়া মাড়োয়ারি স্কুল মাঠে ক্যাম্প করে। ২১ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার মঞ্জুর আহমেদ নাটোর থেকে ঈশ্বরদীতে এসে মিত্রবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার রঘুবীর সিংয়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে।

বীরমুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ঈশ্বরদীর সোনালী ইতিহাস রয়েছে। এ উপজেলায় অনেক জায়গায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে। বীরত্বের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকারদের প্রতিহত করেছে মুক্তিযোদ্ধারা। অবাঙালী অধ্যুষিত ঈশ্বরদীতে পাকিস্তানী বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি ছিল। তাই ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেনি। অবশেষে মিত্র বাহিনীর কাছে ২১ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করলে ঈশ্বরদী হানাদার মুক্ত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের গবেষক বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, ১৯ ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনী ঈশ্বরদীতে আসার পরে ২১ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের দলিল সই হয়। সুতরাং ২১ ডিসেম্বরই ঈশ্বরদী পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হয়।

শেখ মহসীন/জেএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।