ওএমএসের চাল-আটার জন্য আগের রাত থেকে অপেক্ষা
দিনাজপুরে টিসিবির কার্ডে চাল দেওয়া বন্ধ থাকায় ওএমএস’এর আটা ও চাল নিতে মানুষের চাপ বেড়েছে। ওএমএসের চাল-আটার জন্য ১৭ ঘণ্টা আগে থেকেও অপেক্ষা করছে মানুষ।
দিনাজপুর পৌরসভার ১২ ওয়ার্ডে ওএমএস’র ডিলারদের কেন্দ্রে গিয়ে প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে। শীত উপেক্ষা করে সকাল ৯টায় আটা ও চাল নিতে মানুষ আগের দিন বিকেল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। প্রতিজনকে দেওয়া হয় ৫ কেজি আটা ও ৫ কেজি চাল।
শুক্র, শনি ও রোববার তিনদিন টিবিসির কার্ডের চাল দেওয়া বন্ধ থাকায় সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) দিনাজপুর পৌরসভার ১২ জন ডিলারের ওএমএস’র দোকানে ভিড় বেড়ে যায়। ডিলাররা এই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছেন।
দিনাজপুর পৌরসভার সবচেয়ে বড় ওয়ার্ড উপশহর ৯নং ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে ভোটার ২৩ হাজারেরও বেশি। জনসংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। এই ওয়ার্ডে একজন মাত্র ডিলার।
আটা-চাল নিতে আসা দিনমজুর অথির দাস, স্বল্প আয়ের চাকরিজীবী লুৎফর রহমান, লেবার সরদার আবুল হোসেন জানান, আগে ডিলারপ্রতি দুই টন চাল ও ২ টন আটা দেওয়া হতো। পরে তা কমিয়ে ১ টন আটা ও ১ টন চাল দেওয়া হয়েছে। এতে অনেকে চাল-আটা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। তাই অনেকে আটা-চাল পাওয়ার জন্য আগের দিন বিকেল থেকে লাইনে এসে দাঁড়াচ্ছে।
তারা জানান, ওএমএস’র ডিলারের কাছে ২৪ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি আটা ও ২০ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি চাল নিতে লাগে ২৭০ টাকা। এই চাল-আটা বাজারে কিনতে গেলে ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা লাগে। তাই নারী-পুরুষ সবাই ওএমএস’র চাল-আটার জন্য ভিড় করেন। এতে গরিব দুস্থ মানুষের অনেক উপকার হয়।
ওই ওয়ার্ডের ওএমএস’র ডিলার মো. সারওয়ার হোসেন বলেন, মানুষের চাহিদা অনেক। রাত জেগে মানুষ সিরিয়াল দেন। আগে ২ টন চাল ও ২ টন আটা দেওয়া হতো। এখন ১ টন করে দেওয়া হয়। এটি অনেক বড় ওয়ার্ড। আরেকজন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হলে আমার ওপর কিছুটা হলেও চাপ কমতো। আটা ও চাল না পেয়ে মানুষ মন খারাপ করে ফিরে যায়। অনেকে আবার গালিও দেয়।
পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের ১২টি বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। যেখানে একটি কেন্দ্রে ২০০ জনকে পণ্য দেওয়া হবে সেখানে ৫০০-৬০০ জনের লাইন তৈরি হয়।
অপেক্ষমাণ ব্যক্তিরা বলছেন, সকাল তো দূরের কথা, আগের রাতেও আসতে দেরি হলে পরদিন সকালে চাল-আটা পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়েই সারারাত জেগে অপেক্ষা করেন তারা।
পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের মুন্সিপাড়া তালপুকুর এলাকায় ওএসএস’র কেন্দ্রের সামনে চেয়ারে বসে লাইন দিয়েছেন ৭০ বছরের আমেনা বেগম। তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত। চলাফেরা করাই তার জন্য কষ্টের। তবুও এই শীতে ভোর ৪টায় এসেছেন আটা-চাল নিতে।
জাগো নিউজকে আমেনা বেগম বলেন, গত সপ্তাহে আটা-চাল দেওয়ার দিনও তিনি ভোর ৪টায় এসেছিলেন। আজও ভোর ৪টায় এসেছেন।
৬নং ওয়ার্ডের ডিলার মিনারুল ইসলাম মানিক বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। তাই মানুষের ভিড় বেশি। তাছাড়া টিসিবির ডিলারদের মাধ্যমে কার্ডধারীদের যে চাল দেওয়া হচ্ছিল সেটা বন্ধ। অনেকে না বুঝেই সেই কার্ড নিয়ে এসে বলে আমার কার্ডের চাল কেন আমি পাব না। এটা নিয়েও জবাবদিহি করতে হয় মানুষের কাছে।
সোমবার সকালে ওএমএস কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি কেন্দ্রের সামনে একটি করে লাল রঙের ব্যানারে সাদা অক্ষরে চাল-আটার দাম লেখা ব্যানার টাঙানো রয়েছে। যাতে লেখা রয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর পরিচালিত ওএমএস ও টিসিব দোকান। এতে করে চাল ও আটা নিতে আসা মানুষ এবং টিসিবির কার্ডধারীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
এমদাদুল হক মিলন/এফএ/এএসএম