সাপ্তাহিক ছুটিতে হ-য-ব-র-ল কুয়াকাটা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পটুয়াখালী
প্রকাশিত: ০৫:২৯ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০২৩

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে পাল্টে গেছে পর্যটন নগরী কুয়াকাটার পরিবেশ। আগে শুধু সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকলেও এখন প্রায় সব সময়ই ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তবে এখন সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাড়তি পর্যটকদের সামাল দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। সব মিলিয়ে পর্যটকদের হ-য-ব-র-ল এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

এক দশক আগেও কুয়াকাটায় যেতে হলে পটুয়াখালী থেকে তিনটি, বরিশাল থেকে চারটি এবং ঢাকা থেকে পাঁচটি ফেরি পাড়ি দিতে হতো। তবে বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের তিনটি নদীতে ফেরির স্থানে শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রাসেল সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের পায়রা নদীতে নির্মাণ করা হয়েছে লেবুখালী পায়রা সেতু। আর সবশেষ পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কটি ফেরি মুক্ত হয়। এরপর থেকেই পাল্টে গেছে কুয়াকাটার পর্যটন চিত্র। এখন প্রতিদিনই থাকে পর্যটকদের উপস্থিতি। তবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পর্যটক বাড়লে এখানে থাকে না কোনো তদারকি বা নিয়ন্ত্রণ। এ কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হয় পর্যটকরা।

jagonews24

আরও পড়ুন: সৈকতে বছরের প্রথম সূর্যোদয় দেখে মুগ্ধ হাজারো পর্যটক

এদিকে কুয়াকাটায় বেশকিছু দর্শনীয় স্থান থাকলেও এসব স্থানে যাতায়াতের জন্য নেই ভালো কোনো ব্যবস্থা। এ কারণে সব পর্যটকরা কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের আশপাশের এলাকাতেই ভিড় করেন। যার ফলে ১৮ কিলোমিটার সৈকত থাকলেও এর বড় একটি অংশে পর্যটকদের উপস্থিত থাকে না।

এছাড়া কুয়াকাটায় যেসব আবাসিক হোটেল রয়েছে তাতে ছুটির দিনগুলোতে বাড়তি পর্যটকদের থাকার জায়গা পাওয়া যায় না। এর ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে পর্যটকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এ কারণে কুয়াকাটায় বেসরকারিভাবে আবাসিক হোটেল কিংবা রিসোর্ট তৈরিতে বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে মনে করেন পর্যটকরা।

jagonews24

কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমানে কুয়াকাটায় যে আবাসিক হোটেল রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। এখানে পর্যটকদের শ্রেণি ও মানভেদে নতুন নতুন হোটেল গড়ে তোলা দরকার। এতে করে সব শ্রেণির পর্যটকরাই এখানে ভ্রমণ করতে উৎসাহ পাবে। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে বেসরকারি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন: বাড়তি বিনোদন পেতে কুয়াকাটায় হাজারো পর্যটক

বরিশাল শহর থেকে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা আলিম খান বলেন, শুক্রবার বলে কোথাও যেন পা ফেলার জায়গা নেই। কুয়াকাটা বিশাল একটি এলাকা হলেও যাতায়াতের তেমন সুযোগ সুবিধা না থাকায় অল্প কিছু এলাকাতেই মানুষ ভিড় করছেন। খাবার হোটেলগুলোতে সব থেকে খারাপ অবস্থা। কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, যে যা দাম পারছে তাই রাখছে। ব্যবসায়ীদের সেবা দেওয়ার কোনো মনোভাব নেই। এ বিষয়ে সরকারের নজরদারি জরুরি।

এদিকে কুয়াকাটায় নির্মাণাধীন বাসস্ট্যান্ডের কাজ এখনও শেষ না হওয়ায় প্রধান সড়কটিতে সব সময়ই যানবাহনের চাপ লেগে থাকে। যার ফলে অটোরিকশা, ভ্যান কিংবা পায়ে হেটেও নিরাপদে পর্যটকরা সমুদ্র সৈকতে যেতে পারছে না।

পটুয়াখালী চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, কুয়াকাটায় ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে গিয়ে কিছু জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছেন। বিশেষ করে জমি কিনে অনেক ব্যবসায়ী জটিলতায় পরেন। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে জমি অধিগ্রহণ করে কিংবা সরকারি ব্যবস্থাপনায় যদি জমি ক্রয় বিক্রয়ের ব্যবস্থাপনার উদ্যোগে নেওয়া যায় তবে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বাড়বে।

jagonews24

আরও পড়ুন: মোটরসাইকেলের দখলে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, বিরক্ত পর্যটক

কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, কুয়াকাটায় আসা পর্যটকরা যেন কোনো ভাবে হয়রানির শিকার না হন সে বিষয়ে আমরা তৎপর রয়েছি। মাঝে মধ্যে অভিযোগ পেলে আমরা আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছি। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা যেন কুয়াকাটা পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন সেজন্য তাদের সার্বিক সহযোগীতায় পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসন ও কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে।

কুয়াকাটা পর্যটন শিল্প বিকশিত হলে এ এলাকার পাশাপাশি দক্ষিণ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থারও আমূল পরিবর্তন ঘটবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

আব্দুস সালাম আরিফ/জেএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।