মেয়ের শ্লীলতাহানির বিচার না পেয়ে ‘আত্মহত্যা’

এফআইআরে ইউপি চেয়ারম্যানকে ফাঁসানোর অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পঞ্চগড়
প্রকাশিত: ০৭:১১ পিএম, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

পঞ্চগড়ে কলেজপড়ুয়া মেয়ের ‘শ্লীলতাহানির বিচার না পেয়ে’ এক বাবার আত্মহত্যার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। মামলায় প্রধান অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে ইউপি চেয়ারম্যানের দাবি, দুই মামলার এজাহারে তাকে আসামি না করা হলেও একই তারিখে পুলিশের এফআইআরে তাকে ফাঁসানো হয়েছে।

শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে পঞ্চগড় সদর থানায় ধর্ষণ এবং আটোয়ারী থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলাটি করা হয়।

রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পঞ্চগড় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন উপজেলা সদরের মাগুড়া ইউপি চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মণ।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ জানুয়ারি রাতে অভিযুক্ত পলাশ চন্দ্র বর্মন ওই কলেজছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন। বাকি তিন আসামি তাকে সহযোগিতা করেন। ঘটনার সময় ভুক্তভোগী ছাত্রীর চিৎকারে পরিবারের লোকজন এগিয়ে গেলে পলাশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে পলাশ তাদের মারপিট করে সেখান থেকে পালিয়ে যান। পরে আহত অবস্থায় কলেজছাত্রীকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এ ঘটনায় বিচার দাবি করে ২৪ জানুয়ারি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র রায়ের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। বুধবার (১ ফেব্রয়ারি) সালিশ বৈঠক আহ্বান করেন চেয়ারম্যান। তবে বৈঠকে প্রধান অভিযুক্ত পলাশ উপস্থিত না হওয়ার খবরে কোনো পক্ষই আসেনি।

ঘটনার ১৫ দিন পরও কোনো বিচার না পেয়ে আত্মসম্মান রক্ষায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ছাত্রীর বাবা। বুধবার রাতে একটি গাছে ওই ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

মামলার বাদী কলেজছাত্রীর ভাই বলেন, ১৭ জানুয়ারি ঘটনার পর প্রথমে চেয়ারম্যানকে মৌখিকভাবে বলা হয়। এরপর ২৪ জানুয়ারি লিখিত অভিযোগ দেই। চেয়ারম্যান আমাদের নোটিশের মাধ্যমে ১ ফেব্রুয়ারি ইউপি কার্যালয়ে উপস্থিত হতে বললেও প্রধান অভিযুক্ত পলাশ উপস্থিত হবে না বলে আমরা খবর পাই। পরে আত্মসম্মান বাঁচাতে আমার বাবা আত্মহত্যা করেন।

তবে ইউপি চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মণের দাবি, বাদীর করা দুই মামলার এজাহারে তাকে আসামি করা না হলেও পুলিশি এফআইআরে তাকে আসামি করা হয়েছে। বাদীর করা দুই মামলার আসামিরা হলেন ওই ইউনিয়নের লাখেরাজ ঘুমটি এলাকার পলাশ চন্দ্র বর্মণ (২৫), তার বাবা শ্যামল চন্দ্র বর্মণ (৪৬), একই এলাকার ভবেন বর্মণ (৫০) এবং কাজল বর্মন (২৩)।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ২৪ জানুয়ারি আমাদের দেওয়া অভিযোগ আর ৪ জুন করা অভিযোগ সম্পূর্ণ আলাদা। আমাকে দেওয়া অভিযোগে ধর্ষণের কোনো কথা ছিল না। হাত ধরে টানাটানির মাধ্যমে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করা হয়েছিল। ধর্ষণের বিষয়টি থাকলে আমি বৈঠকে সুরাহার কথা না বলে থানায় খবর দিতাম। এছাড়া ঘটনার পর থেকেই আমি তাদের আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। এজন্য দুই মামলায় আমাকে আসামি করা হয়নি। কিন্তু পুলিশ কোনো তদন্ত না করেই বাদীর অভিযোগ দাখিলের একই দিন এফআইআরে আমাকে আসামি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে আটোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা বলেন, এজাহারে আসামির তালিকায় ইউপি চেয়ারম্যানের নাম না থাকলেও গর্ভাংশে তার নাম রয়েছে। এজন্য এফআইআরে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন) এসএম সফিকুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেকটি মামলায় প্রথমে অভিযোগ আকারে এজাহার দাখিল করা হয়। এজাহারের বিস্তারিত দেখে এবং তদন্ত করে পুলিশ অভিযুক্তের তালিকা করে। দীর্ঘ তদন্তে নির্দোষ হলে অনেকের নাম বাদ দিতে হয়। আবার এজাহারে নাম নেই অথচ তদন্তে অনেককে আসামি করা হয়। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সফিকুল আলম/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।