বাঘের মুখ থেকে ফেরা
হাসপাতালে অনকুল, মা পেলেন নতুন ঘর-অটোরিকশা

সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন জেলে অনুকুল গাইন। ১৯ দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ফামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি। এখন তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে।
এদিকে অনুকুল গাইনের পাশে দাঁড়িয়েছেন বনবিভাগ, স্থানীয় লোকজন ও সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম। তাদের সহায়তায় অনুকুলের পরিবারকে একটি নতুন ঘর তুলে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দেওয়া হয়েছে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে অনুকুল গাইনের মা ও গীতা রানীকে নতুন ঘর দুটি এবং অটোরিকশা বুঝিয়ে দেন জিউধারা স্টেশন কর্মকর্তা মো. শাহজাহান ও যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মোহসীন-উল হাকিম।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের জিউধারা স্টেশন কর্মকর্তা মো. শাহজাহান বলেন, ২৭ জানুয়ারি সকালে সুন্দরবনের আমুরবুনিয়া এলাকার সুদীরেরচিলা নামক খালে মাছ ধরতে যান জেলে অনুকুল গাইন (৩০)। খালে চরপাটা জাল দিয়ে মাছ ধরার এক পর্যায়ে অনুকুলের ওপর একটি বাঘ আক্রমণ করে। তার চিৎকারে সহযোগী জেলে মাহবুব নৌকায় থাকা কচা (চিকন গাছ) দিয়ে বাঘকে আঘাত করলে চলে যায়। অনুকুলকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেই থেকে এখনো পর্যন্ত অনুকুল সেখানে আইসিইউ বিভাগে চিকিৎসাধীন আছেন। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা আগের তুলনায় ভালোর দিকে।
বন কর্মকর্তা আরও আরও বলেন, ১৫ বছর আগে মারা যান অনুকুলের বাবা মুকুন্দ গাইন। বাবার অবর্তমানে একমাত্র মাকে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকেন হতদরিদ্র অনুকুল। সুন্দরবনে মাছ ধরে চলছিল মা আর এক ছেলের সংসার। অনুকুলের মা মানসিক ও শারীরিকভাবে চলাচলে অক্ষম হওয়ায় মাছ ধরার পাশাপাশি রান্নাবান্নার কাজও করতে হতো তাকে। কিন্তু হঠাৎ করে বাঘের আক্রমণের শিকার হওয়ায় সবকিছু থমকে গেছে।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে জেলের ওপর বাঘের আক্রমণ
শাহজাহান বলেন, অনকুলের চিকিৎসার জন্য বনবিভাগের পক্ষ থেকে তাকে নগদ ১২ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য গ্রামবাসীও সহায়তা করছেন। এছাড়া ঢাকায় তার চিকিৎসার ব্যয়সহ সব সময় খোঁজ রাখছেন সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম। তিনি অনুকুলের জন্য কাঠ-টিনের নতুন একটি ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে অনুকুলের ফুপু গীতা রানীকেও (৬০) একটি নতুন ঘর করে দিয়েছেন তিনি।
সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম বিভিন্ন সময় জেলে-বাওয়ালিদের সহায়তা করে আসছেন জানিয়ে বন কর্মকর্তা শাহজাহান বলেন, শীতে কম্বল বিতরণ, ঝড়-বন্যায় ত্রাণ ও আত্মসমর্পণ করা সাবেক দস্যু পরিবারকেও চাকরিসহ নানা কর্ম দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। তিনি সুন্দরবন এলাকার মানুষের কাছে একজন প্রিয়জন, বন্ধু ও পরোপকারী হিসেবে পরিচিত। তার নাম শুনলে ছুটে আসেন সুন্দরবনের জেলে-বাওয়ালিরা।
নতুন ঘর পেয়ে স্বামী হারা গীতা রানী বলেন, আমি সাংবাদিক মোহসীনের জন্য আমৃত্যু আশীর্বাদ করবো, কারণ ঝুপড়ি ঘরে শীত-বৃষ্টিতে থাকতে কষ্ট হতো। খাই আর না খাই এখন শান্তিতে তো ঘুমাতে পারবো।
আরও পড়ুন: বিষ প্রয়োগ বন্ধে কাজ করছেন মোহসীন-উল হাকিম
গীতা রানী আরও বলেন, সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরে ৫০-১০০ টাকা হয়, কখনো হয়ও না। গোন শেষ হলে গ্রাম থেকে শাক তুলে হাটে বিক্রি করি। এতে ১০০-১৫০ টাকা হয়। তা দিয়ে চাল, আলু কিনে খাই। একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড ছিল ছয় মাস হলো আমার নাম কেটে তাও বাদ দিয়ে দিয়েছে মেম্বর-চেয়ারম্যান। এখন কীভাবে চলবো জানি না। যদি কেউ খাওয়ার ব্যবস্থাটা করে দিতো তাহলে ভালো হতো।
সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম বলেন, বিবেক ও মানবতার জায়গা থেকেই নিজ সাধ্যমত বাঘের আক্রমণের শিকার অনুকুল এবং স্বামী হারা গীতা রানীকে থাকার মতো দুটি নতুন ঘর করে দিয়েছি মাত্র। আর অনুকুলের শারীরিক যে অবস্থা তাতে সে বাড়ি ফিরে সহসা কাজ করতে পারবে না। তাই নিজে চালাতে না পারলেও অন্তত ভাড়া দিয়ে হলেও যাতে তার সংসারটা চলে এ জন্য একটি অটোরিকশা কিনে দিয়েছি। আপাতত অটোরিকশাটি জেলে মাহবুব ভাড়ায় চালিয়ে আয়ের টাকা অনুকুলের পরিবারকে দেবেন। তাতে দুই পরিবার খেয়ে পরে চলতে পারবেন।
আবু হোসাইন সুমন/এসজে/জেআইএম