পায়রা বন্দরে ক্ষতিগ্রস্তদের রামনাবাদে সুখের নীড়

আব্দুস সালাম আরিফ আব্দুস সালাম আরিফ , জেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী
প্রকাশিত: ০১:১৪ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

পটুয়াখালী পায়রা সমুদ্র বন্দরের জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখন সুখে-শান্তিতে বসবাস করছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নির্মাণ করা ঘরগুলো পরিকল্পিত একটি আবাসন প্রকল্প হওয়ায় আধুনিক এবং উন্নত শহরের সব সুযোগ-সুবিধা মিলছে এখানে। পায়রা সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব ঘর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ক্ষতিগ্রস্তদের উপহার হিসেবে দিচ্ছে।

একটা সময় ছিল যখন ঝড় জলোচ্ছ্বাসের খবরে নির্ঘুম রাত কাটতো কলাপাড়া উপজেলার রামনাবাদ পাড়ের মানুষদের। নদীভাঙন ছিল তাদের জন্য নিত্যদিনের ঘটনা। তাইতো অভাব-অনটন লেগে থাকতো এই এলাকার মানুষদের। তবে পায়রা বন্দরে জমি অধিগ্রহণে তিনগুণ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আধুনিক পাকা বাড়ি পেয়ে এখন সুখে-শান্তিতে বসবাস করছেন তারা।

jagonews24

আরও পড়ুন: পায়রা বন্দরের যাত্রা শুরু

পাখির চোখে দেখলে জায়গাটি উন্নত কোনো শহরের মতো লাগবে। কিন্তু না, এটি পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্র বন্দরে ক্ষতিগ্রস্তদের আবাসিক এলাকা। প্রশস্ত সড়ক, পয়োনিষ্কাশন, সুপেয় পানি, বিদ্যালয়, মসজিদ, বাজার, খেলার মাঠ, পুকুরসহ সব সুবিধা রয়েছে এসব আবাসিক এলাকায়। আর বন্দরের জমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ৩ হাজার ৪৪টি পরিবারের জন্য ১৪টি প্যাকেজে এসব বাড়ি তৈরি ও হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলমান। প্রতিটি বাড়িতে তিনটি বেডরুম, দুটি বাথরুম, একটি রান্নাঘর ও একটি বারান্দা রয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য দুটি সাইজে বাড়িগুলো বানানো হয়েছে। যেসব পরিবারের ২০ শতকের বেশি জমি অধিগ্রহণ হয়েছে তাদের জন্য ৯৭৮ বর্গফুট এবং যাদের ২০ শতকের কম জমি অধিগ্রহণ হয়েছে তাদের জন্য ৮৮৫ বর্গফুটের এসব একতলা পাকা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।

সম্প্রতি পায়রা বন্দরের এই আবাসন এলাকা ঘুরে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হয়। ১ নম্বর আবাসনের ২৩ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা মো. ফোরকান প্যাদা জাগো নিউজকে বলেন, আমরা তো নদীভাঙন এলাকার মানুষ ছিলাম। আমাদের এলাকায় কোনো বেড়িবাঁধ ছিল না। আমরা ঝড়-বন্যার সঙ্গে যুদ্ধ করেই চলতাম। তবে পায়রা বন্দরে জমি দেওয়ার পর তিনগুণ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার পর আমরা এখন ইউরোপের আদলে বাড়ি পেয়েছি।

jagonews24

আরও পড়ুন: ‘সিঙ্গাপুরকেও ছাড়িয়ে যাবে পায়রা বন্দর’

তিনি বলেন, স্থানীয় মানুষরা আমাদের এই এলাকাকে দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর বলে ডাকে। আর এখন আমরা ঝড় বন্যা কী তা বলতে পারি না। কারণ, সরল জমি থেকেও ১০ ফুট উঁচু করে এই আবাসিক এলাকা তৈরি করা হয়েছে। এখন আমাদের বন্যার কোনো ভয় নেই। আমাদের এখানে সব সুবিধা আছে। শহরের থেকেও আমরা বেশি সুবিধা ভোগ করছি। আর এ কারণে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।

পায়রা বন্দরের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তৈরি করা আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, এখন অনেক ভালো আছি, বাইরে তো কোনো জায়গা-জমি নেই। সরকার জমি নিয়া যেই টাকা দিছে দুই পোলায় সেই টাকা দিয়া নতুন নতুন বাড়ি করছে, আর আমরা স্বামী-স্ত্রী এই আবাসনে বিল্ডিংয়ে উঠছি। এখন তো ঝড়-বন্যায় কোনো কষ্ট হয় না।

তিনি বলেন, আগে ভাটার সময় রান্না করছি আর জোয়ারে খেয়েছি। বন্যা হলে তো দুর্ভোগের শেষ ছিল না। জোয়ারের সময় ঘরে পানি উঠলে খাটের ওপর থাকতাম। এবার যে বন্যা হয়েছে তা আমরা চোখেও দেখিনি। আগে খাওয়ার জন্য দূর থেকে পানি আনতে হতো। এখন বাসায় সাপ্লাইয়ের পানি। সবকিছুতেই শান্তি।

jagonews24

পায়রা বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল জাগো নিউজকে বলেন, এটিই দেশের প্রথম কোনো প্রকল্প যাতে তিনগুণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পরও আধুনিক আবাসিক এলাকা তৈরি করে উপহার হিসেবে ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হয়েছে। আর এই পুরো বিষয়ের প্রধানমন্ত্রীর। তিনি সবসময় পায়রা বন্দরের বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখছেন।

আরও পড়ুন: তিন প্রকল্পে বদলে যাবে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি

তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তৈরি করা ঘরগুলো ধাপে ধাপে হস্তান্তর করা হচ্ছে। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে করা হয়। এরইমধ্যে দুই হাজারের অধিক ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।

আব্দুস সালাম আরিফ/এমআরআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।