জমিতে বাড়ছে লবণাক্ততা, কমছে আবাদ

আব্দুস সালাম আরিফ আব্দুস সালাম আরিফ , জেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী
প্রকাশিত: ০৮:১৪ এএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
পটুয়াখালীতে দিন দিন বাড়ছে লবণাক্ত জমির পরিমাণ। ছবি-জাগো নিউজ

পটুয়াখালীতে দিন দিন বাড়ছে লবণাক্ত জমির পরিমাণ। শুষ্ক মৌসুমে জেলার মোট আবাদি জমির ২৭.৫ শতাংশে কোনো ফসলই ফলানো সম্ভব হচ্ছে না। বিগত বছরের তুলনায় এবার অনেক আগেই জমিতে দেখা দিয়েছে লবণাক্ততা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে আগামীতে উপকূলীয় এলাকার কৃষি হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা কৃষি বিজ্ঞানীদের।

পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, পটুয়াখালী জেলার মোট আবাদি জমির পরিমাণ তিন লাখ সাত হাজার ৮৭৫ হেক্টর। এরমধ্যে লবণাক্ত জমির পরিমাণ এক লাখ ৫৫ হাজার ১৮০ হেক্টর, যা মোট জমির ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ। এরমধ্যে ৪২ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে কৃষক কিছু কিছু ফসল চাষাবাদ করলেও তারা লাভবান হচ্ছেন না। আর ১৫ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে কোনো ফসলই চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না।

জমিতে বাড়ছে লবণাক্ততা, কমছে আবাদ

আরও পড়ুন: লবণ উৎপাদন থেমে যাওয়ার শঙ্কা

প্রতিবছর মার্চ থেকে এপ্রিলে লবণাক্ত জমির উপরিভাগে লবণের সাদা আস্তরণ পড়তে দেখা যায়। তবে এবার ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকেই লবণের আস্তরণ পড়তে শুরু করেছে, যা কৃষকের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

গলাচিপা এবং কলাপাড়া উপজেলায় এ লবণাক্ততার প্রভাব সবচেয়ে বেশি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গলাচিপা উপজেলার ১১ হাজার ৬২০ হেক্টর এবং কলাপাড়া উপজেলার চার হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে কোনো ফসলই ফলানো সম্ভব হচ্ছে না।

জমিতে বাড়ছে লবণাক্ততা, কমছে আবাদ

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার একটি ইউনিয়ন নীলগঞ্জ। সম্প্রতি ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনেক উঁচু জমিতেও লবণের সাদা আস্তরণ পড়েছে। ফলে অন্য ফসল তো দূরের কথা, এসব জমিতে এখন ঘাসও মরে যাচ্ছে। কৃষকরা সবজি চাষের জন্য উঁচু করে যে বেড তৈরি করেছেন তা খালি পড়ে আছে।

আরও পড়ুন: দুই মাসের ব্যবধান, ভরা নদী এখন ধু ধু বালুচর

ওই এলাকার কৃষক জাকির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘চারপাশে যে নদী আছে তাতে এখন লবণ পানি। বর্ষা মৌসুমে যে পানি সংরক্ষণ করে রাখি তা দিয়েই চাষাবাদ করতে হয়। কিন্তু এখন লবণের মাত্রা অনেক বেশি হওয়ায় হাতেগোনা কিছু ফসল ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না।’

জমিতে বাড়ছে লবণাক্ততা, কমছে আবাদ

গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের কৃষক সোবহান গাজী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে আমন ধান ওঠার পর একটা ফসল দিতে পারতাম। এখন লবণের কারণে জমিতে কিছু লাগাইলে গাছ ওঠতে ওঠতেই তা পুইড়া যায়। তাই এখন আর আমন ধান ছাড়া জমিতে কিছু দেই না (চাষাবাদ করি না)। ফাও খাডনি কইরা কী লাভ?’

আরও পড়ুন: অপরাধে জড়াচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, উপকূলীয় এলাকার জমিতে লবণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাদেরও ভাবিয়ে তুলছে।

জমিতে বাড়ছে লবণাক্ততা, কমছে আবাদ

তিনি বলেন, ‘কৃষকদের লবণসহিষ্ণু বিভিন্ন জাতের ফসল চাষাবাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ এবং আমন ধান কাটার পর জমিতে খড়কুটা বিছিয়ে রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। এতে জমিতে রস থাকবে এবং উপরিভাগে লবণের আস্তরণ পড়বে না।’

এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।