বাহা উৎসবে মাতলো গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালপল্লী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ১০:০৩ পিএম, ১১ মার্চ ২০২৩

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা নিজেদের ঐতিহ্যে নাচ-গানে বরণ করলেন ঋতুরাজ বসন্তকে। এ উপলক্ষে শনিবার (১১ মার্চ) গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতালপল্লীতে বাহা পরবে মেতে ওঠেন সাঁওতাল নারী-পুরুষরা।

‘সাঁওতালদের ভাষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য রক্ষায় চাই রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উদ্যোগ’ স্লোগানে উপজেলার কাটাবাড়ি ইউনিয়নের আদমপুর মিশন সংলগ্ন বুজরুকবেড়া আদিবাসী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বাহা পরব বা বসন্ত উৎসব উদযাপন করেন সাঁওতালরা।

বাহা উৎসবে মাতলো গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালপল্লী

নাচে-গানে আনন্দ উল্লাসের মাধ্যমে আদিবাসী সাঁওতালরা তাদের নিজস্ব কৃষ্টি সংস্কৃতিতে বাহা পরবের মাধ্যমে ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করেন। দিনভর পূজা-অর্চনা ও সাঁওতাল সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিপুল সাঁওতাল নারী-পুরুষ-কিশোরী অংশ নেন। এদিন সাঁওতাল ও স্থানীয় বাঙালিদের আগমনে মিলনমেলায় পরিণত হয় গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লী। পরে স্থানীয় আদিবাসী শিল্পীদের পাশাপাশি আমন্ত্রিত সাঁওতাল সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করে।

বাহা উৎসবে মাতলো গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালপল্লী

বাহা পরব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ডা. ফিলিমন বাস্কের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গাইবান্ধা পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ জাহেদ হাসান, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশের কৃষি ও পরিবেশ ইউনিটের প্রধান মোস্তফা নূরুল ইসলাম রেজা, পরিবেশ আন্দোলন গাইবান্ধার আহ্বায়ক ওয়াজিউর রহমান রাফেল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু, অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবীর তনু আলোচনা করেন।

সাঁওতালরা আমাদের দেশেরই নাগরিক, তাদের কৃষ্টি ও ঐতিহ্য এদেশের সংস্কৃতিরই অংশ উল্লেখ করে আলোচকরা সাঁওতালদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ, সাঁওতালসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় তাদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষাদান ও কালচারাল একাডেমি স্থাপনের দাবি জানান।

বাহা উৎসবে মাতলো গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালপল্লী

বাহা পরব উদযাপন কমিটি আহ্বায়ক ডা. ফিলিমন বাস্কে বলেন, প্রাণ-প্রকৃতিকে ভালোবেসে সাঁওতাল জনগোষ্ঠী বাহা উৎসব পালন করে। এই বাহা উৎসবের পূজা-পার্বণ করলে আমাদের সমাজ ও পরিবারের উন্নয়ন হবে। বাহা পূজা না করা পর্যন্ত সাঁওতাল নারীরা বাহা ফুল অর্থাৎ শাল ফুল ছিড়েও না মাথায়ও পরে না। ভবিষ্যতে যাতে এই ঐতিহ্যবাহী বাহা পরব হারিয়ে না যায়, সেজন্য নতুন প্রজন্মকে জানাতেই এই আয়োজন।

আদিবাসী সাঁওতালদের অন্যতম একটি প্রধান পার্বণ হচ্ছে ‘বাহা উৎসব’ বা বাহা পরব। বাহা অর্থ ফুল। তাই বাংলায় বাহা পরবকে ‘ফুল উৎসব’ বলা হয়। মূলত নববর্ষ হিসেবে ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালন করেন সমতলে বসবাসকারী আদিবাসী-সাঁওতালরা। উত্তরাঞ্চলে সমতলে বসবাসকারী আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ওঁরাও, মুন্ডা, মালো, মাহাতো, মালপাহাড়ি, রাজওয়ারসীসহ মোট ৩৮টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এই বাহা উৎসব পালন করে থাকে।

এমআরআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।