ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা জোসনা, থেমে গেছে জীবিকার চাকা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ১০:২৭ এএম, ২২ মার্চ ২০২৩

বিভিন্ন জায়গায় ফেরি করে কাপড় বিক্রি করে জীবিকানির্বাহ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের জোসনা বেগম। এই কাপড় বিক্রি না হলে জোটে না খাবার। দুই সন্তান নিয়ে থাকতে হয় অনাহারে অর্ধাহারে। এরইমাঝে গত ২৪ দিন ধরে খোঁজ মিলছে না প্রতিবন্ধী ছেলের। ফেরি করে কাপড় বিক্রি বন্ধ রেখে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে বেড়াচ্ছেন সন্তানকে। ফলে ঘরে খাবার যোগান দিতেও পারছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের উত্তর লক্ষ্মীপুরের সাতঘর হাটি গ্রামের দিনমজুর মুর্শেদ মিয়ার সঙ্গে প্রায় ৩৫ বছর আগে জোসনা বেগমের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে তিন ছেলে এবং তিন মেয়ে আছে। এরমধ্যে দুই ছেলে হাদিস মিয়া (১৭) ও রায়হান (১৪) প্রতিবন্ধী। ছয় ছেলেমেয়েকে রেখে ৯ বছর আগে মুর্শেদ মিয়া মারা যান।

এরপর জোসনা ছেলেমেয়েদের নিয়ে পড়েন বেকায়দায়। পরিবারের হাল ধরতে তিনি বিভিন্ন হাটবাজার ও গ্রামে গ্রামে গিয়ে কাপড় ফেরি করে বিক্রি শুরু করেন। এর থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই ছোট এক ছেলে ও এক মেয়েকে এতিমখানায় দিয়ে দেন।

এরই মাঝে বড় দুই মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হয়ে যায়। গ্রামবাসীর সহায়তায় দুই মেয়েকে বিয়ে দেন। বাড়িতে ছিল প্রতিবন্ধী দুই ছেলে। প্রতিদিন জোসনা ফেরি করে কাপড় বিক্রি করতে যাওয়ার আগে দুই ছেলের জন্য রান্নাবান্না করে খাবার দিয়ে যান। বিকেলে আবার বাড়িতে ফিরে আসেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে জোসনা প্রতিদিনের মতো রান্না করছিলেন। এরইমাঝে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় তার বড় ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী হাদিস মিয়া। এরপর থেকে গত ২৪ দিন কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন স্থানে ছেলের খোঁজ করে ছুটে চলেছেন জোসনা। সন্তানের খোঁজে বের হওয়ায় কাপড় বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে অনেক সময় ঘরে থাকা অপর প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে থাকছেন তিনি।

জোসনা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। আমার সম্পদ বলতে আমার সন্তানেরা। বড় ছেলেটাকে খুঁজে পাচ্ছি না আজ ২৪ দিন হলো। বোবা ছেলেটাকে ঘরে রেখে হারিয়ে যাওয়া ছেলেটাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। স্থানীয় লোকজন একেক সময় একেক তথ্য দেয়। সেই তথ্যে ছেলের সন্ধানে কিশোরগঞ্জের ভৈরব, বাজিতপুর, নরসিংদী সদর, মেথিকান্দা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন উপজেলায় ছুটে যাচ্ছি। কিন্তু সব জায়গা থেকে নিরাশ হতে হচ্ছে। পাশাপাশি ছেলের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ায় কাপড় বিক্রি করতে যেতে পারছি না। কাপড় বিক্রি না করলে ঘরে খাবারও জোটে না। প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরা মাঝে মাঝে খাবার পাঠাচ্ছেন। আজ একজন ১০ কেজি চাল দিয়েছেন, আরেকজন রমজানের বাজার করে দিয়ে গেছেন।

তিনি বলেন, আমার হারিয়ে যাওয়া ছেলেটিকে দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না সে প্রতিবন্ধী। সে রাস্তা দিয়ে হাঁটবে আর শিশুদের মতো হাসবে। যেদিন বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় তার পরনে সাদা জ্যাকেট ও কালো রঙের ট্রাউজার ছিল।

ছেলের সন্ধান দাতাদের ০১৭৮৫৯৭৮০২৮ নম্বরে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন জোসনা বেগম।

এ বিষয়ে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুদ্দিন আনোয়ার জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। ঘটনাটি দুঃখজনক। ছেলেটির পরিবার থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হলে আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখবো। আমরা ছেলেটির সন্ধান চেয়ে সব থানায় বার্তা পাঠাবো।

আবুল হাসনাত মো. রাফি/এমআরআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।