কুড়িয়ে নেওয়া ধুলামাটিতেই চলে তাদের জীবন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নড়াইল
প্রকাশিত: ১১:০০ এএম, ২২ মার্চ ২০২৩
ঝাড়ু দিয়ে স্বর্ণকারের দোকানের সামনের ধুলামাটি জড়ো করছেন তারা

স্বর্ণকারের দোকানের সামনের ধুলামাটি সংগ্রহ করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন হাবিব শেখ ও তার স্ত্রী আমেনা বেগম। ওই মাটি থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় বের করা সোনা-রূপার কণা বিক্রির টাকায় চলে তাদের সংসার। ছয় মাস ধরে এ কাজ করছেন তারা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে অভাবে এ পেশায় ঝুঁকছেন আরও অনেকেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নড়াইলের পৌর শহরে শতাধিক জুয়েলার্স আছে। এসব দোকানে গহনা তৈরির সময় সোনা ও রূপার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা মাটিতে পড়ে। দোকান মালিক ঘর ঝাড়ু দেওয়ার সময় বা স্যান্ডেলের সঙ্গে এসব ধাতব কণা কখনো কখনো বাইরেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে।

কুড়িয়ে নেওয়া ধুলামাটিতেই চলে তাদের জীবন

সেখানকার ধুলামাটি সংগ্রহ করে প্রথমে একটি চুল্লিতে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় আগুনে পোড়ানো হয়। এরপর সোনা বা রূপার কোনো কণা থাকলে তা বেরিয়ে আসে। সেই কণা বিক্রির করে কিছু মানুষের জীবিকা চলছে।

ভাদুলিডাঙ্গার হাবিব শেখ ও তার স্ত্রী আমেনা বেগমের মতো বর্তমানে কালিয়ার ভোমবাগ গ্রামের বাবু মোল্যা, পৌর শহরের ভওয়াখালি এলাকার সবুর মৃধা (৪৫), আজিজুল মোল্যাসহ অনেকেই এখন এ পেশায় যুক্ত হয়েছেন। এছাড়া যশোর, খুলনা, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ জেলা থেকেও অনেকে নড়াইলে এসে এ সোনার দোকানের পাশে ধুলামাটি সংগ্রহ করেন।

কুড়িয়ে নেওয়া ধুলামাটিতেই চলে তাদের জীবন

হাবিব বলেন, ‘যেখানে সোনার গহনা তৈরি হয় সেখানকার ছাই কিনতে গেলে একটি নির্দিষ্ট অর্থ মালিককে দিতে হয়। তবে লাভও বেশি হয়। এখন অর্থের অভাবে বিনা পয়সায় দোকানের সামনের ধুলামাটি সংগ্রহ করি। কোনো দিন কিছু আয় হয় আবার কোনো দিন হয় না। গড়ে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা আয় হয়।’

পৌর শহরের ভওয়াখালী এলাকার বাসিন্দা আজিজুল মোল্যা বলেন, ‘দোকানের সামনের ধুলামাটি কুড়াতে গেলে মালিকদের টাকা দেওয়া লাগে না। তবে দোকান মালিকের অনুমতি নিতে হয়। কিছু সোনা ও রূপার কণা পাওয়া গেলে বিক্রির পর কিছু টাকা আয় হয়। বেশি কণা পেলে দোকান মালিকদের মিষ্টিও খাওয়াই।’

কুড়িয়ে নেওয়া ধুলামাটিতেই চলে তাদের জীবন

নড়াইল জেলা জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ জুয়েলার্সের মালিক চঞ্চল রায় জাগো নিউজকে বলেন, স্বর্ণকারের দোকানে কারিগর যখন সোনা-রূপার কাজ করে তখন তাদের কাপড়ে টুকরো লেগে থাকে। এরা কাজের ফাঁকে বাইরে বের হলে দোকানের সামনে কিংবা আশপাশে এসব টুকরো পড়ে যায়। কিছু মানুষ দোকানের সামনে থেকে এসব ধুলামাটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় পুড়িয়ে সোনা-রূপার কণা বের করে। এতে কোনো টাকা দেওয়া লাগে না।

তিনি আরও বলেন, তবে দোকানের ভেতর যেখানে গহনা তৈরি হয় সেখানকার ছাই কিনতে হয়। এতে স্বর্ণকাররা অনুপাতে বছরে ১০-৫০ হাজার টাকা পায়।

হাফিজুল নিলু/এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।