পাঙাশের কেজি ৩০০

আমিন ইসলাম জুয়েল আমিন ইসলাম জুয়েল , জেলা প্রতিনিধি ,পাবনা পাবনা
প্রকাশিত: ০৬:৫৯ পিএম, ২৩ মার্চ ২০২৩

রমজানকে ঘিরে পাবনার বাজারে আগুন। পেঁয়াজ, ছোলা, খেজুরের দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহর ব্যবধানে সবজির দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ব্রয়লার মুরগি ও রসুনের দামও ক্রেতার নাগালের বাইরে। দাম বেড়েছে চাষের পাঙাশ ও তেলাপিয়ার। আকারভেদে প্রতি কেজি পাঙাশের দাম ২৫০-৩০০ টাকা কেজি। ফলে বাজার করতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন-মধ্যবিত্তরা। অনেকে বাজার করা কমিয়ে দিয়েছেন।

পাবনার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের খুচরা দাম কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে। অথচ পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ ৯০০-১২০০ টাকা।

jagonews24

এক কেজির কার্টনের খেজুরের পাইকারি দাম বেড়েছে ৩৫০-৪০০ টাকা। খোলা খেজুর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। যেটা গত রমজানে ছিল ৭০ টাকা। রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। গত রমজানে ছোলা ছিল ৭০ টাকা কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০- ৯৫ টাকা দরে। ডালের দাম বেড়েছে বলে বেসনের দামও বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া অ্যাংকর ডালের বেসন পাইকারি প্রতি বস্তা গত রমজানে ছিল ২০০০ টাকা। সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ২৭০০ টাকা দরে। জিরার কেজিতে বেড়েছে ২০০ টাকা।

ব্রয়লার মুরগির দাম খামারির কাছ থেকে ২০০-২১০ টাকা কেজি দরে কিনছেন ব্যবসায়ীরা। এক হাত বদল হয়েই দোকানে প্রতি কেজিতে তা প্রায় ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৫৫ টাকা। খামারিরা বলছেন, মুরগির খাবারের যে দাম তাতে তারা প্রতি কেজিতে ৫ টাকা লাভ করতে হিমশিম খান। সেখানে দোকানদাররা এক কেজিতে লাভ করেন ৪৫-৫০ টাকা। লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩২০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৫০ টাকা।

গরিবের মাছ বলে পরিচিত পাঙাশে কেজি ছিল ১২০ টাকা। তা বেড়ে হয়েছে আকারভেদে ২৫০-৩০০ টাকা। একসময় তেলাপিয়ার কেজি ছিল ১৩০ তা গত তিনমাসের ব্যবধানে হয়েছে ২২০-২৩০ টাকা।

এদিকে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০-১২০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা। এক হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। এক কেজি গুড় বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা।

জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েই চলায় অনেকে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। মধ্য আয়ের বেশ কয়েকজন জানান, তারা ভালো নেই। এখন তাদের দুঃসময় চলছে। শুধু খাদ্যদ্রব্য নয়, জীবন-যাপনে প্রয়োজনীয় সবকিছুর দামই হু হু করে বাড়ছে। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে তাদের। সবকিছুর দাম বাড়লেও থেমে আছে আয়। এ অবস্থায় সংসার জীবনে টিকে থাকা দায় হয়েছে।

পাবনার অনন্তবাজারের বাসিন্দা ও স্কুল শিক্ষক আব্দুল খালেক বলেন, মাসে ৩০ হাজার টাকা আয় করেও এখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। বাসা ভাড়া, সন্তানদের পড়াশোনার খরচ, অফিসে যাতায়াতসহ সংসারের যাবতীয় খরচের সঙ্গে যোগ হয়েছে নিত্যপণ্যের লাগামহীন বাড়তি মূল্য।

আতাইকুলা বাজারের বাসিন্দা মানিকুজ্জামান বলেন, রমজান এসে গেলো। অথচ বাজার অস্থির হয়ে আছে। যেটা মোটেও কাম্য নয়। বাংলাদেশে একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে আর কমতে চায় না। এটা যেন স্বাভাবিক নিয়মে দাঁড়িয়েছে।

jagonews24

পাবনা শহরের বড় বাজার থেকে চাল, ডাল, লবণ, সয়াবিন তেল, মসলা, তরল দুধ ইত্যাদি কিনছিলেন রাধানগরের বাসিন্দা রাজু সেখ। জিনিসপত্রের দাম কেমন জানতে চাইলে বলেন, ‘এমন কোনো জিনিস নেই, যার দাম বাড়েনি।’

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) পাবনার সেক্রেটারি এস এম মাহবুব আলম জাগো নিউজকে বলেন, দেশে অনিয়ম যেন নিয়ম হয়ে গেছে। রমজানের সময় মূল্য বেড়ে যায়। কেন বাড়ে, কারা বাড়ায় এটা দেখভাল করার কেউ আছে বলে মনে হয় না। এবারও বেড়েছে। সরকার বিভিন্ন বিষয়ে নজর দেওয়ার কথা বললেও সিন্ডিকেটকে কোনোমতে ভাঙা যাচ্ছে না। তারা তাদের সাধ্যমত বাজার মনিটরিং করবেন বলে জানান।

পাবনা চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি ফোরকান রেজা বাদশা বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। এছাড়া বড় বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চেম্বারের পক্ষ থেকে বৈঠক করেছি। ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছি কেউ যেন রমজানকে পুঁজি করে অনৈতিকভাবে দাম না বাড়ান। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হবে।

জেলা মার্কেটিং অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সুজন আলী জাগো নিউজকে বলেন, বাজারদর নিয়ে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সভা হয়েছে। ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। রোজার মাসে আরও বেগবান হবে।

এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।