ঈদগাঁও থানা পুলিশের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কক্সবাজার
প্রকাশিত: ১০:৪৭ এএম, ২৪ মার্চ ২০২৩
ঈদগাঁও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী

কক্সবাজারের ঈদগাঁও থানা পুলিশের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে ঈদগাঁও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ মানববন্ধন হয়। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ নানা পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নলকূপের পানি চলাচল নিয়ে বাকবিতণ্ডায় চাচা-ভাতিজার মারামারিতে নেইল কাটার (নখ কাটনি) দিয়ে ভাতিজার বাম কাঁধে জখম করে চাচা শাহজাহান। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে চাচাকে ধরতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। তবে তার দুধের সন্তানসহ স্ত্রীকে নিয়ে যায় ঈদগাঁও থানা পুলিশ।

২০ মার্চ দুই সন্তানসহ ২৪ ঘণ্টা থানা হাজতে রেখে আদালতে পাঠানো হয় অভিযুক্ত শাহজাহানের স্ত্রী-সন্তানকে। অবশ্য শিশুসন্তানসহ জামিন পান ওই নারী। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে ঈদগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) গিয়াস উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়।

এ ঘটনার রেশ না কাটতেই বুধবার ঈদগাঁও থানা পুলিশের অপর কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে সাদা পোশাকে বাস স্টেশনে ট্রাকচালককে জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানালে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন পুলিশের ওই সদস্যরা।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরুল রাশেদের জানান, ঈদগাঁওর জালালাবাদ পূর্বফরাজীপাড়া এলাকায় প্রতিবেশী মৃত নজীর আহমেদের ছেলে শাহজাহান ও মৃত আবু শামার ছেলে হারুন অর রশীদের পরিবারে নলকূপের পানি চলাচলের ড্রেন নিয়ে বাগবিতণ্ডা হয়। এ ঘটনায় শাহজাহান নেইল কাটারের ছুরি দিয়ে হারুনকে আঘাত করে আহত করে। ঘটনাটি মীমাংসাযোগ্য। কিন্তু পুলিশ স্বামীকে না পেয়ে নিরীহ স্ত্রী ও দুধের শিশুকে বেআইনিভাবে থানায় নিয়ে আটকে রাখে। এটি সভ্য সময়ে চরম অমানবিকতা- মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল।

অভিযোগের বিষয়ে ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম কবির বলেন, ‘ভাতিজা হারুনের বাম কাঁধের হাড়ের নিচে ছুরিকাঘাত মারাত্মক ছিল। পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয় আঘাতকারী শাহজাহানকে ছুরি দিয়েছে তার স্ত্রী। এ কারণেই ঘটনাটি ঘটে। তাই পুলিশ তাকে ধরে এনেছে। তাকে আনতে গিয়ে মায়ের সঙ্গে শিশুও কারাভোগ করেছে, এখানে পুলিশ নিরুপায়।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী বাপ্পি শর্মা জাগো নিউজকে বলেন, মা আসামি হলে তাকে আটকের সময় দুধের শিশুকেও নিয়ে আসে এটা স্বাভাবিক ঘটনা। তবে ঈদগাঁওর ঘটনাটি একটু ভিন্ন। স্বামীর অপরাধে স্ত্রীকে পুলিশ ধরে আনার ১৮-২০ ঘণ্টা পর মামলা নথিভুক্ত হয়েছে বলে প্রচার পাচ্ছে। ঘটনা সঠিক হলে, মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। কারণ একজনের অপরাধে অপরজন সাজা ভোগ করার নজির সংবিধান দেয়নি। স্বামীর অপরাধে স্ত্রী আর বাবার অপরাধে বাচ্চার কারাভোগ করার মতো হলো ঈদগাঁওর ঘটনাটি।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আটক মায়ের সঙ্গে যেহেতু দুধের শিশু আছে সেহেতু ঘটনাটি আরো সফটলি হ্যান্ডেল করা যেত। এরপরও যে কর্মকর্তার অদূরদর্শিতার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাকি বিষয়গুলো সরেজমিন তদন্ত ও করণীয় বিষয়ে কাজ করছেন একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। স্থানীয় ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির সুন্দর সমাধান ও অন্যরা দোষী হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সায়ীদ আলমগীর/এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।