বগুড়া
শেয়ারবাজার নিয়ে সংশয় কাটছে না বিনিয়োগকারীদের
বারবার দরপতনের কারণে বগুড়ার বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ারবাজার নিয়ে সংশয় কাটছে না। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা যদিও বলছে বাজারে এ ধরনের উত্থান-পতন স্বাভাবিক একটি বিষয়, কিন্তু বিনিয়োগকারী এবং বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজারে অস্থিরতার বিষয়টি এখন দীর্ঘমেয়াদি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই বলছেন, আমরা ঝুঁকি নিয়ে অনেক টাকা পুঁজি হারিয়েছি। এখন নতুন করে কেন আবার সেই পথে যাবো?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ায় ১৪টি ব্রোকারেজ হাউজের শাখা অফিস রয়েছে। এর মধ্যে আইসিবি, মাল্টি সিকিউরিটিজ, রয়েল সিকিউরিটিজ, শেলটেক সিকিউরিটিজ, গ্লোবাল সিকিউরিটিজ, আইডিএলসি ফিন্যান্স, লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ, শ্যামল ইক্যুইটি, এনসিসি সিকিউরিটিজ, ব্যাংক এশিয়া, ফিনট্রা সিকিউরিটিজ, ইউনাইটেড ব্রোকারেজ, র্যাপিড ব্রোকারেজ ও মাইকা সিকিউরিটিজ অন্যতম।
আরও পড়ুন: দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা, ব্রোকারদের বিস্ময়
মাল্টি সিকিউরিটিজ বগুড়া ব্রাঞ্চ ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজারে অস্থিরতা চলছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার অভাব। সরকার শেয়ারবাজারের অস্থিরতা ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও গৃহীত পদক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারেনি। সে কারণে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা আস্থা রাখতে পারছেন না।
শেলটেক সিকিউরিটিজ বগুড়া ব্রাঞ্চ ম্যানেজার এএনএম ফয়সাল আজম জানান, বর্তমান শেয়ারবাজারে সূচক নিম্ন পর্যায়ে। বাজারে টাকার ঘাটতি নেই। ঘাটতি বিনিয়োগে আস্থা রাখা। সাধারণ বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট করতে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
মিল্টন নামের এক বিনিয়োগকারী জানান, ২০০৯ সাল থেকে শেয়ারবাজারে আছি। বিনিয়োগ করেছিলাম ৩০ লাখ টাকা। তা কমতে কমতে এখন ৭ লাখ টাকায় নেমেছে। দুর্মূল্যের বাজারে পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিন যাপন করছি। তবুও আশায় আছি কবে নাগাদ শেয়ারবাজার ভালো হবে।
আরও পড়ুন: রাস্তায় নামলেন বিনিয়োগকারীরা
আরেক বিনিয়োগকারী অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আব্দুল হাই জানান, শেয়ারবাজার দস্যুদের কবলে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বাঁচাতে চাইলে এ দস্যুদের চিহ্নিত করে শেয়ারবাজার থেকে সরাতে হবে। অবসরের শেষ সম্বল শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে এখন হতাশায় পড়ে কথাগুলো ক্ষোভের সঙ্গে বলছিলেন তিনি। তিনি বিনিয়োগবান্ধব শেয়ারবাজার গড়তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের কাছে দাবি জানান।
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট এবং বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার এবং ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের তুলনায় স্টক মার্কেট বড় হয়নি। অনেক কোম্পানি তাদের মূলধন জোগাড়ের জন্য স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত করে না। টাকার জন্য তারা ব্যাংক ঋণের ওপর বেশি নির্ভর করে। নতুন নতুন কোম্পানি না আসায় বাজারের আকারও প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়ছে না।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির সংখ্যা যদি প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়তো তাহলে বাজার পরিস্থিতিও ভিন্ন রকম হতে পারতো।
আরও পড়ুন: নতুন বছরে শেয়ারবাজারে বেড়েছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী
একটি ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তা জানান, সাধারণত যে শেয়ারের দাম কমে বিনিয়োগকারীরা সেটি কেনে। শেয়ারের দাম বাড়লে বা লাভ হলে বিক্রি করে। কিন্তু বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং ডলার সংকটের কারণে কয়েক মাস ধরে কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে না। আবার ফ্লোর প্রাইসের কারণে দাম কমাও সম্ভব নয়। ফ্লোর প্রাইসের কারণে দামি অনেক শেয়ার কিনে বিপুল পরিমাণ টাকা আটকে রাখার মতো ক্রেতা নেই। আবার যদি কেউ দামি এই শেয়ারগুলো কেনে, আগামী এক মাসেও বিক্রি করতে পারবে না। তাহলে কেন কিনবে।’
ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া নিয়ে তিনি বলেন, এখন বাজার ডাউন। ফ্লোর প্রাইস তুলে নিলে ফোর্স সেল বাড়বে। সেটা আরেকটা বিপদের কারণ। এ কারণে ফ্লোর প্রাইস তোলা সম্ভব হচ্ছে না।
এসএইচএস/এমএস