শেয়ারবাজারে আস্থা হারিয়েছেন ময়মনসিংহের গ্রাহকরাও

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ০৪:২০ পিএম, ২৫ মার্চ ২০২৩

শেয়ারবাজারে ধসের পর ময়মনসিংহের গ্রাহকরাও শেয়ারের প্রতি আস্থা হারিয়েছেন। দিন দিন কমছে গ্রাহক। তলানিতে নেমেছে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়। গত এক যুগে লেনদেন কমে নেমেছে প্রায় ২০ শতাংশে।

শ্যামল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড সূত্র জানায়, ২০১০ সালে মাসিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮৮ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লেনদেন নেমে এসেছে প্রায় ৫ কোটি টাকায়। অর্থাৎ ৮৮ কোটিকে ৫ কোটি দিয়ে ভাগ দিলে দাঁড়ায় প্রায় ১৮ শতাংশ। ১২ বছরে লেনদেন নেমে এসেছে প্রায় ১৮ শতাংশে।

ফরচুন সিকিউরিটিজের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১০ সালে মাসে লেনদেন ছিল প্রায় ৪০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তা নেমে এসেছে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকায়। অর্থাৎ ৪০ কোটিকে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা দিয়ে ভাগ দিলে দাঁড়ায় প্রায় ২২ শতাংশ। অতএব ১২ বছরে লেনদেন নেমেছে প্রায় ২২ শতাংশে।

jagonews24

আরও পড়ুন: নতুন বছরে শেয়ারবাজারে বেড়েছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী

নগরীর নতুন বাজারের জনতা ব্যাংকের দ্বিতীয়তলায় ফরচুন সিকিউরিটিজ ও ছোট বাজার ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের দ্বিতীয়তলার শ্যামল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডে গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া যায়। তবে ময়মনসিংহে ব্রোকারেজ হাউজের কোনো সংগঠন না থাকায় মোট লেনদেন বা গ্রাহকের সংখ্যা জানা যায়নি।

সূত্র জানায়, ময়মনসিংহে ৯টি ব্রোকারেজ হাউজের শাখা রয়েছে। এগুলো হলো শ্যামল সিকিউরিটিজ, রশিদ সিকিউরিটিজ, ফরচুন সিকিউরিটিজ, মশিউর সিকিউরিটিজ, বিডি সান-লাইফ সিকিউরিটিজ, আকিজ সিকিউরিটিজ, আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ, গ্লোব সিকিউরিটিজ ও রাসতি সিকিউরিটিজ।

ফরচুন সিকিউরিটিজের অফিসে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ার-টেবিল ও কম্পিউটার ছাড়া কোনো গ্রাহক নেই। অফিসে বসে আছেন শুধু ফরচুন সিকিউরিটিজের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

jagonews24

এ বিষয়ে ফরচুন সিকিউরিটিজ অথোরাইজ রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. আরিফুল হক পলাশ বলেন, আমাদের প্রায় ৩ হাজার ক্লায়েন্ট ছিল। বর্তমানে তা নেমেছে ৫০০-তে। ২০১০ সালে শেয়ার ব্যবসা অনেক ভালো ছিল। পরে এই ব্যবসায় ধস নামে। এরপর ২০১৩-১৪ সালে কিছুটা ভালো হলে আবারও ধস নামে। পরে এই ব্যবসা উঠে দাঁড়ায়নি। বর্তমানে শেয়ারবাজারের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়েছে। তবে, সরকার যদি উদ্যোগ নেয় তাহলে এই শেয়ারবাজার আবার উঠে দাঁড়াতে পারে।

আরও পড়ুন: রাস্তায় নামলেন বিনিয়োগকারীরা

শ্যামল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের অফিসে গিয়ে দেখা যায়, ৭-৮ জন গ্রাহক অফিসে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ কাজ করছেন।

শ্যামল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের অফিসে বসে আড্ডা দিচ্ছেন শেয়ারহোল্ডার গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস। তিনি বলেন, বর্তমানে শেয়ারবাজারের অবস্থা খুব খারাপ। শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় নেই। যেসব শেয়ার ক্রয় করেছিলাম, তা বিক্রি করার জন্য বসে আছি। কিন্তু বেচাকেনা হচ্ছে না।

jagonews24

মোস্তফা কামাল নামে আরেকজন বলেন, শেয়ারবাজার দেখার মতো কেউ নেই। দেশে সব কিছুর দাম বাড়ে। কিন্তু, শেয়ারের দাম বাড়ে না। মুষ্টিমেয় কিছু শেয়ার ওঠানামা করছে। অন্য কোম্পানিগুলোর শেয়ার স্থিতিবস্থায় আছে। আমাদের কেনা শেয়ারগুলো নিয়ে বিপাকে আছি। বিক্রি করতে পারলে বেঁচে যেতাম।

আরও পড়ুন: দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা, ব্রোকারদের বিস্ময়

খালিদ মাহমুদ খান বলেন, বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার ৬ মাস আগেও ১৮৫ টাকা পর্যন্ত দাম ছিল। এখন ১১৫ টাকা ৬০ পয়সা। বছর খানেক আগে রবির প্রতি শেয়ারের দাম ছিল ৮০ টাকা, এখন ৩০ টাকা। তারপরেও বায়ার নেই। স্কয়ার ফার্মার শেয়ার ছয় মাস আগে ৩৩০ টাকা ছিল। এখন ২০৯ টাকা ৮০ পয়সা। লাফার্জ হোলসিম লিমিটেডের শেয়ার ছয় মাস আগে ১০৭ টাকা ছিল। এখন ৬৪ টাকা ৮০ পয়সা। এসব কারণে শেয়ারবাজারে এত বড় ধস।

শ্যামল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ইনচার্জ বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী বলেন, আজ থেকে এক যুগ আগে শেয়ারবাজার অনেক ভালো ছিল। ওই সময় মাসে ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকা লেনদেন করা সম্ভব হয়েছে। চলতি মাসে তা নেমে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা হয়েছে। শেয়ারবাজার থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

এসএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।